ভার্সিটিতে যত টাইপের মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি

আমার চোখে পড়া যত ধরনের মেয়েদের দেখেছি ভার্সিটিতে, সেগুলো নিয়ে কিছু কথা বলবো এখন!

কিছু ধরনের মেয়ে আছে যাদের অ্যালডোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ হয় বেশি। এরা হচ্ছে ছেলে টাইপের মেয়ে। এদের বেশিরভাগের শরীর হয় হাড্ডিসার, ছেলেদের মত কিল-ঘুষি-লাথি সবকিছুই দেওয়াতে এক্সপার্ট হয় এরা। মুখ প্রচন্ড পাতলা। যখন যেটা আসে সেটাই বলে দেয় এরা মুখ দিয়ে। তাই এদের ছেলেবন্ধুরা প্রায় সব ধরনের কথা এদেরকে বলতে পারে। এরা সাধারণত ক্লাসে পেছনের দিকে বসে। পড়ালেখায় তেমন মন থাকে না এদের কিন্তু এক্সাম টাইমে প্রচন্ড সিরিয়াস হয়ে যায় এরা। এদেরকে খোঁচা মেরে কথা বললে এদের গায়ে লাগে না তেমন একটা। তবে ঝগড়া করার ক্ষেত্রে অনেক এক্সপার্ট এরা। ছেলেদের টিফিন চুরি করা, টঙ্গের দোকানে বসে অন্যান্য ছেলেদের সাথে আড্ডা মারা এদের নিত্যদিনের কাজ। মজার ব্যাপার হলো এরা তেমন একটা ঢং (মানে ভণিতা) করতে জানে না। প্রচন্ড স্ট্রেট ফরোয়ার্ড স্বভাবের হয় এরা। যা বলার সরাসরি বলে দেয়।

ভার্সিটিতে কিছু মজার মেয়ে থাকে। বেশি শান্তও না, বেশি দুষ্টও না। এদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়া যায়। পড়ালেখায় ভালো মনযোগ থাকে এদের। খুব সুন্দরভাবে হাসতে জানে এরা। কেউ কেউ পর্দা করে ভার্সিটি আসে। কারো সাথে কথা বলার সময় এরা চোখে চোখ রেখে কথা বলে। এরা মানুষের কাছ থেকে পাওয়া মোটিভেশন ভালো কাজে লাগাতে পারে। বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়েই সময় কেটে যায় এদের। কিছুটা খামখেয়ালি টাইপের হয় এরা। ছেলেদের খুব ভালো বন্ধু হতে পারে এই টাইপের মেয়েরা। কেউ এদের প্রশংসা করলে এরা খুব খুশি হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে এই ধরনের মেয়েগুলো কিছুটা উদাসীন থাকে। মনে মনে হাজারটা উদ্ভট উদ্ভট চিন্তা করে এরা। ফেসবুকে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখলে যার-তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এরা গ্রহণ করে। কিন্তু সবার মেসেজের রিপ্লে দেয় না।

ভার্সিটিতে কয়েকজন মেয়ে থাকে মহিলাগোছের। প্রথম দেখাতেই এদেরকে মহিলা বলে ভুল হয়। এরা একটু গতানুগতিক টাইপের মেয়ে। এদের অনেকেই এমন পরিবার থেকে উঠে এসেছে যেখানে আধুনিকতার তেমন কোনো ছোঁয়া নেই। এরা মোবাইলে বিশেষ একটা ছবি তুলে না। ক্লাসে আসে, অবসর সময় মোবাইলে চোখ বুজে রাখে, ক্লাস শেষ হলে বাসায় চলে যায়। এরা ক্লাসের প্রতি প্রচন্ড সিরিয়াস থাকে। স্যার ক্লাসে যেটা বলবে সেটাকেই এরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবে। এরা প্রেম-টেম তেমন একটা করে না। কারন এদের অনেকেই বিবাহিত হয়ে থাকে। কেউ কেউ বাচ্চাদের নিয়ে ক্লাস করে, কেউবা বাচ্চা পালতে গিয়ে ক্লাস ফাঁকি দেয়। এদের নামে মাত্র ফেসবুক একাউন্ট থাকে। সেখানে এরা হয়ত একটা ফুলের ছবি, বাচ্চার ছবি কিংবা পুতুলের ছবি প্রোফাইলে দিয়ে রাখে।

কিছু মেয়ে আছে খুব সুন্দরী। সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে দুটো ভাগ থাকে। অহংকারী সুন্দরী, সাধারণ সুন্দরী। সাধারণ সুন্দরী মেয়েগুলা এককথায় নিষ্পাপ। এরা নিজের রূপ বা চেহারা নিয়ে তেমন একটা ভাবে না। প্রতিদিন ভার্সিটিতে হালকা পাতলা সাজগোজ করে আসে। কেউ বেণি বেধে ভার্সিটি আসে, কেউ চুলে চপচপে তেল দিয়ে আসে, কারো কারো চুলে রঙ করা থাকে, আবার কারো চুল দেখা না হিজাবের আড়ালে। এরা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। ছেলেরা এই ধরনের মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বেশি মজা পায় না। কারন এই টাইপের সুন্দরী মেয়েগুলোর চেহারা অনেক সাদা-সিদা হয়। দেখলে মায়া পড়ে যায়। এরা ফ্রি মাইন্ডে সবার সাথে কথা বলতে পারে। বন্ধুমহলে এরা তেমন একটা জনপ্রিয় হয় না। এরা পরিক্ষার সময় খুব টেনশনে থাকে নিজেদের প্রিপারেশন নিয়ে। সেই সময়টাতে তাদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে দেখতে। এদের কপালে মাঝে মাঝে বয়ফ্রেন্ড ঝুটে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভার্সিটিতে চলাফেরা করার সময় সংকোচবোধ করে তারা। এরা ফেসবুকে মাঝেমাঝে অতটা সক্রিয় না। নিউজফিড স্ক্রল করতেই বেশি পছন্দ করে এরা।

অপেক্ষাকৃত ও তথাকথিত সুন্দরী মেয়েরা হঠাৎ করে অহংকারী হয়ে যায় নাহ! জীবনের শুরুর পর্যায় এরা সবার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলে, স্বাভাবিক আচরণ করে। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে আশেপাশের সবাই তার প্রতি বেশি আগ্রহী, তখন তার মধ্যে অটোমেটিক আভিজাত্য ব্যাপারটা কাজ করে। নিজেকে তখন একটা বাউন্ডারির ভেতরে রেখে সবার সাথে সম্পর্ক রাখে। চেহারা কিংবা রূপ নিয়ে তুলনা করার ক্ষেত্রে এদের সেনসিটিভিটি অনেক বেশি। অন্য কোনো মেয়ে দেখলে এরা আড়চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজেকে তার সাথে তুলনা করা শুরু করে। কোনো মেয়ে নতুন ড্রেস পড়ে এদের সামনে আসলে এরা খুটে খুটে দেখে ড্রেসটা দেখতে কেমন, এই রঙের ড্রেসে তাকে মানাবে কিনা, ড্রেসটার দাম কত নিয়েছে, কোন জায়গা থেকে কিনলো এই ড্রেসটা ইত্যাদি ভাবতে থাকে। অন্য মেয়েদের fairness নিজের তুলনায় কতটা কম-বেশি, সেটা ধরে ফেলার অসাধারণ ক্ষমতা আছে এদের.. 

কিছু মেয়ে আছে যাদের চেহারা বোকা বোকা। তাদের দেখলে বরং মায়াই লাগে এটা ভেবে যে, তারা খুব বোকাসোকা। নেহাতই বাচ্চাসুলভ! সবার কাছে ঠকে যাওয়ার ভান করে এরা। তাদের চেহারাটাই এমন করে রাখে যে গোবেচারা গোবেচারা লাগে সবার কাছে! কিন্তু এরা দারুণ চালাক। মানুষকে উল্টে ভেজে খেতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা আছে এদের। গোবেচারা সেজে এরা আপনার কাছ থেকে উপকার নিবে, আর আপনিও উপকার করতে বাধ্য! কারণ একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের সিমপ্যাথিকে খুব হালকাভাবে নেয়, ছেলেরা সিরিয়াসলি নেয়.. আপনাকে দিয়ে কৌশলে কাজ করাবে, আপনার সিমপ্যাথি কাজে লাগাবে। যতক্ষন ধরে কেউ ওদের কাজ করে দিবে, ততক্ষণ তারা তার খোঁজখবর নিবে, তার কাজে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু এগুলো সবই ক্ষণকালীন! ওদের কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে তারা আপনাকে চিনবেও না। 

আরেক ধরনের বহুরূপী মেয়ে থাকে ভার্সিটিতে। এরা তিনটা ক্যাটাগরির হয়। এক ক্যাটাগরির মেয়েরা ভার্সিটি ভর্তি হবার প্রথম দিকে বেশ সাজগোজ করে, খোলা চুলে ভার্সিটি আসে। কয়েক সেমিস্টার যাওয়ার পর হিজাব ধরে। তাদের হঠাৎ দেখে চেনাই যায় না তারা ফার্স্ট সেমিস্টারে কতটা স্টাইলিশ ছিলো! আরেক ক্যাটাগরির মেয়েরা শুরুতে ভার্সিটি আসে পর্দা করে। মাথায় সবসময় হিজাব থাকে, রাখডাক করে চলে ভার্সিটিতে। কিন্তু কয়েক সেমিস্টার যাওয়ার পর এদের পর্দা উধাও হয়ে যায়! নিয়মিত সাজগোজ করে খোলা চুলে ভার্সিটি আসে।

তিন নাম্বার ক্যাটাগরির মেয়েরা আরেকটু অন্যরকম। এরা সাধারনত পর্দা করেই সবসময় ভার্সিটিতে আসে। কিন্তু ভার্সিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এদেরকে খোলা চুলে কিংবা সাজগোজ করে আসতে দেখা যায়। এরা নিজেদেরকে তেমন একটা প্রকাশ করে না কারো কাছে। আমি কিছু পারি না, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, এই ধরনের হতাশজনক কথা শোনা যায় এদের কাছ থেকে। কিন্তু এরা ঠিকই নিজের প্রশংসা শুনলে খুব খুশি হয়। অনেক কিছু জেনেও না জানার ভান করে থাকে এরা। নির্দিষ্ট কিছু বান্ধবীদের সাথে এরা সারাটা ভার্সিটি লাইফ কাটিয়ে দেয়। ফেসবুকে এদের কোনো ছবিই বেশিদিন স্থায়ী থাকে না। নিজেদের ছবি আপলোড দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সেটাকে আবার কেটে দেয়। ভার্সিটিতে পড়াকালীন কারো সাথে রিলেশন করার আগ্রহ থাকে না এদের। নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর বিয়ে করার চিন্তা করে এরা। 

ভার্সিটিতে কিছু মেয়ে আছে যাদের চেহারা অতটা ভালো না কিংবা গায়ের রং অতটা উজ্জ্বল না। কিন্তু এরা নিজেদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ দিয়ে নিজেদেরকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারে। এদের প্রতিটা কাজেই স্মার্টনেস জিনিসটা দেখা যায়। এরা খুব স্মার্ট করে কথা বলে। এরা কারো কথায় পাত্তা দেয় না। চেহারা কিংবা গায়ের রং নিয়ে এরা ততটা ভাবেও না। এদের মূল টার্গেট থাকে ভার্সিটিতে পড়ালেখা করতে এসেছে সেটা কিভাবে ভালো করে করবে সেটা নিয়ে। এদের স্মার্টনেসের কারনে এদেরকে সুন্দর দেখায়। তবে এরা স্ট্রেট ফরোয়ার্ড স্বভাবের বলে যেকোনো কথা ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি বলে ফেলে। ফেসবুকের কোনো কিছুই এরা নিজেদের বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে ফেলে না। ভার্চুয়াল জগতের চেয়ে বাস্তব জগতের ঘটনাগুলোতে এরা বেশি বিশ্বাসী। ভার্সিটিতে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন হলে এরাই প্রথমে এগিয়ে আসে সেগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য।

ভার্সিটিতে আরেক ধরনের মেয়ে আছে খোঁচানো স্বভাবের। সুন্দরী কিংবা অসুন্দরী দুই ধরনের মেয়েরাই এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। এরা নিজের ক্লাসমেটদের পাশাপাশি অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সহ্য করতে পারে না। এরা একজনের দোষ আরেকজনের কাছে লাগায়। ক্লাসের কেউ এদের সাথে একটু মজা করলে কিংবা সিরিয়াস কোনো কিছু নিয়ে সামান্য কিছু বললে এরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। এরা এদের বান্ধবিদের সাথে প্রায়ই সময় অন্য মেয়েদের নিয়ে পরচর্চা করতে থাকে। মাথার ভেতর সবসময় প্রতিশোধ নেয়ার একটা আগুন জ্বলে এদের। কেউ এদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেও দোষ আবার খারাপ ব্যবহার করলেও দোষ। প্রচন্ড খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয় এরা। এদের কোনো বন্ধু যদি পরিক্ষায় একটু ভালো নাম্বার পায় তবে এদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এরা প্রতিটা জিনিসকে নিয়ে শুরুতে নেগেটিভ চিন্তা করে। শিক্ষকদের দোষ দিতেও ছাড়ে না এরা। যখন ভার্সিটিতে একটু সিনিয়র হয়ে যায় তখন ক্লাসে কাউকে তোয়াক্কা করে না এরা। এরা প্রচন্ড সেনসিটিভ। মানুষের প্রতিটা কথা এরা মনে রাখতে পারে এবং সুযোগ পেলে সেগুলো অন্যের কাছে বলে দেয়। ফেসবুকে এদের সমান বিচরণ দেখা যায়। কোন বন্ধু কি ছবি দিলো, কি লেখা দিলো সেগুলো নিয়েও দোষ বের করতে ছাড়ে না এরা।