মানুষের মধ্যে যেমন নিগ্রো, শ্বেতাঙ্গ, বাঙ্গালি, ইংরেজ এসব জাত আছে তেমনি জ্বিনদের মধ্যেও বিভিন্ন জাত আছে। জ্বিন নিয়ে বেশ কিছু রিসার্চ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের কিছু প্রকারভেদ বা জাত পেয়েছি। সেগুলো নিয়েই আমার লেখা-
মারিদ | Marid
মারিদ জাতের জ্বিনগুলো হচ্ছে প্রায় সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী জ্বিন। এসব জ্বিন বেশিরভাগ সময় মানুষের ক্ষতি করে। এরা যাকে ধরে তাকে অসুস্থ বানিয়ে ছাড়ে। আরবে বেশিরভাগ দৈত্যদেরকে এই জ্বিনদের শ্রেণিতে রাখা হয়। এসব শ্রেণির জ্বিনদের প্রচুর ক্ষমতা থাকে। তারা কিছু টুকিটাকি কাজ যেমন নকশা করা, কোনো কিছু বানানো ইত্যাদি জানে। তারা আমাদের যেকোনো জিনিস তাদের চোখ দিয়ে ধ্বংস করার মত ক্ষমতাও রাখে। সমুদ্রে The Bahamut নামক একটা দৈত্যাকার মাছ আছে যাদেরকে এই জ্বিনের অন্যতম একটা রূপ বলে ধরা হয়।
মারিদ জ্বিনগুলো প্রধানত পানিযুক্ত জায়গায় থাকে কারন এদের উৎপত্তি সমুদ্র থেকে। তাই বাসার পাশের ঢোবা কিংবা পুকুরে ঝোপঝাড় যুক্ত জায়গা এদের থাকার জন্য খুব ভালো বাসস্থান। যখন কোনো মারিদ জ্বিন বন্দী অবস্থায় বদ্ধ কোনো জায়গা যেমন বোতল, পাতিল কিংবা এই ধরনের কিছু থেকে মুক্ত হয় তখন তারা ভয়ানক গতি নিয়ে বের হয় যেটা অনেক কিছুকে নষ্ট করে দিতে পারে। মারিদ জ্বিনগুলো সাধারণ উপায়ে তাড়ানো খুব কঠিন কারন এরা খুব শক্তিশালী। এদেরকে তাড়ানোর জন্য অনেকক্ষেত্রে বাগানের গাঁদা ফুল ব্যবহার করা হয়।
হীন | Hinn
আমরা অনেকে হয়ত বাসায় পোষা প্রাণি হিসেবে কুকুর, বিড়াল কিংবা খরগোশ পালি। এসব পশুর রূপ ধরে সহজেই জ্বিন আমাদের বাসায় প্রবেশ করে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এই ধরনের জ্বিনদের নাম হচ্ছে হীন। এরা পশুর রূপ ধরে থাকা জ্বিন, বিশেষ করে কুকুরের রূপ ধরে থাকে এরা। এই ধরনের জ্বিন জাতি বেশ শক্তিশালী। স্বপ্নের মধ্যে হীন বিভিন্ন পশুর রূপ ধরে আমাদেরকে তাড়াতে পারে।
ঘুল | Ghoul
বিভিন্ন ধরনের জ্বিনদের মধ্যে ঘুল হচ্ছে অন্যতম বিপদজনক জ্বিন জাতি। এরা খুব সহজেই নিজেদের আকার পরিবর্তন করতে পারে। এরা মানুষ কিংবা অন্যান্য পশুপাখির রক্ত খায় বেশি। মানুষের ধ্বংসাত্মক কাজ করার জন্য অন্যরকম খ্যাতি আছে এদের।
আমাদের মধ্যে যেমন ছেলে এবং মেয়ে আছে, Ghoul জ্বিনগুলোর মধ্যেও তেমনি ছেলে এবং মেয়ে জ্বিন আছে। মেয়ে জ্বিনগুলোকে ঘুলা (Ghula) বলে ডাকা হয়। ঘুলা জ্বিন সাধারণ মেয়ে মানুষের মত রূপ নিতে পারে। এরা কোনো ছেলের দিকে নজর দিলে সেই ছেলেকে বিয়ে করার চেষ্টা করে নতুবা ছেলেটার ক্ষতি করে। যারা কবরের কাছাকাছি থাকেন, যাদের বাসা মাটির নিচে বা পাতালে কিংবা যারা একদম নিরিবিলি এবং খালি জায়গায় থাকেন তাদেরকে বেশিরভাগ সময় আক্রমন করে Ghoul জ্বিনের জাতি
মরুভূমিতে এরা মাঝেমাঝে অপরিচিত প্রাণির রূপ ধরে চলাফেরা করতে পারে যেগুলোকে দেখে মানুষ অনেকসময় ভয় পায়। পার্সিয়ানদের মতে Ghoul জ্বিন জাতিটির পা হচ্ছে গাধার মত এবং শিং হচ্ছে ছাগলের মত। তবে ওদের এই তথ্যের সত্যতা জানা যায়নি যেহেতু Ghoul জ্বিনজাতিরা ক্ষণে ক্ষণে নিজেদের আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।
জান | Jaan
জান হচ্ছে একধরনের জ্বিন যারা নিজেদের আকার পরিবর্তন করতে পারে। এরা মরুভূমিতে থাকে বেশি, মরুভূমির ঘূর্ণিঝড় বা সাদা উটের রূপ ধরে আসে এরা। এরা মানুষের ব্যাপারে খুব খোলা মনের। এরাই প্রথম মানুষের সাথে প্রকাশ্যে দেখা করতে এসেছিলো। এরা মরুভূমিতে যেকোনো জিনিস অদৃশ্য করে ফেলতে পারে। এরা সাধারনত ঘুল জ্বিনদের শত্রু।
ইফরীত | Ifrit
জ্বিনদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক, সবচেয়ে খারাপ এবং উগ্র ধরনের জ্বিন হচ্ছে ইফরীত প্রজাতির জ্বিন। এদের কথা কোরানে বিভিন্ন জায়গায় লিখা আছে লিখা আছে। ইফরীত জ্বিন জাতিটা খুব শক্তিশালী। এদেরকে সহজে কন্ট্রোল করা যায় না। যত ধরনের খারাপ কাজ এবং মানুষের ক্ষতি সব কাজ করে এরা। এরা খুব ভয়ংকর।ইফরীত | Ifrit
ইফরীতকে নরকের জ্বিনও বলা হয়। মানূষের ক্ষতি করাটাই এদের আসল কাজ। এরা অনেক বেশি নিষ্ঠুর ধরনের হয়। এদের বিশাল বড় আগুনের তৈরি ডানা আছে বলে শোনা যায়। এরা নিজেরা বিয়ে করে তবে মানুষকেও বিয়ে করতে পারে।
সাধারণ অস্ত্র বা শক্তি দিয়ে ইফরীত জ্বিনকে বিনাশ করা যায় না। হোয়াইট ম্যাজিক বা সাদাজাদু করে এদের বিনাশ করা যায় যেটা মানুষ করতে পারে। এরা সবসময় খারাপ কাজ গুলো বেশি করে।
নাসনাস | Nasnas
নাসনাস নামক জ্বিন গুলো মানুষের বিকৃত রূপের মত দেখতে। অর্থাৎ এরা দেখতে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশুর মত, এক কথায় যারা হাইব্রিড টাইপের জ্বিন। তবে এদের বেশিরভাগ সময় অর্ধেক করে সবকিছু থাকে যেমন অর্ধেক মাথা, অর্ধেক শরীর, একটা হাত, একটা পা এরকম। সোমালিয়াতে এদেরকে "xunguruuf" কিংবা "Hungruf" ডাকা হয়। এরা প্রচন্ড ভয়ংকর, একজন মানুষকে শুধুমাত্র স্পর্শ করেই তাকে মেরে ফেলতে পারে এরা।
পালিস | Palis
নাসনাস নামক জ্বিন গুলো মানুষের বিকৃত রূপের মত দেখতে। অর্থাৎ এরা দেখতে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশুর মত, এক কথায় যারা হাইব্রিড টাইপের জ্বিন। তবে এদের বেশিরভাগ সময় অর্ধেক করে সবকিছু থাকে যেমন অর্ধেক মাথা, অর্ধেক শরীর, একটা হাত, একটা পা এরকম। সোমালিয়াতে এদেরকে "xunguruuf" কিংবা "Hungruf" ডাকা হয়। এরা প্রচন্ড ভয়ংকর, একজন মানুষকে শুধুমাত্র স্পর্শ করেই তাকে মেরে ফেলতে পারে এরা।
পালিস | Palis
এই জ্বিনের জাতিটা মরুভূমিতে থাকে। এদের প্রজাতিটা বেশ বোকা টাইপের। তাই সহজে এদের ধোকা দিতে পারে মানুষ। এ ধরনের জ্বীন বেশিরভাগ সময় ঘুমন্ত মানুষকে আক্রমণ করে। এদের গায়ে মোটামুটি ভালোই জোর আছে। তবে এদেরকে ধরা এবং বন্দী করা খুব সহজ।
যারা জ্বিন নিয়ে বেশি রিসার্চ করে কিংবা জ্বিন ধরার জন্য বিভিন্ন অজানা মন্ত্র পড়ে, অথবা জ্বিনকে কাছে আনার জন্য বিভিন্ন কাজ করে সাধনা করে তারা হচ্ছে পালিস জ্বিনদের প্রধান শত্রু। এই জাতের জ্বিন গুলো মানুষের রক্ত খেতে পছন্দ করে। তারা মানুষের রক্ত খাওয়া শুরু করে পা থেকে। তারপর শরীরের বিভিন্ন অংশের রক্তও খায় এরা।
যারা জ্বিন নিয়ে বেশি রিসার্চ করে কিংবা জ্বিন ধরার জন্য বিভিন্ন অজানা মন্ত্র পড়ে, অথবা জ্বিনকে কাছে আনার জন্য বিভিন্ন কাজ করে সাধনা করে তারা হচ্ছে পালিস জ্বিনদের প্রধান শত্রু। এই জাতের জ্বিন গুলো মানুষের রক্ত খেতে পছন্দ করে। তারা মানুষের রক্ত খাওয়া শুরু করে পা থেকে। তারপর শরীরের বিভিন্ন অংশের রক্তও খায় এরা।
সিলাত | Si’lat
সিলাত জ্বিন আকার আকৃতি সহজেই পরিবর্তন করতে পারে। তাই এদেরকে চেনা খুব মুশকিল। এরা খুবই স্মার্ট টাইপের হয়। এরা সহজেই মানুষের কাজ নকল করতে পারে। এরা অনেক কৌশলী হয় এবং বিভিন্ন নকশা তৈরি করতে জানে। এরা মানুষের ছেলেমেয়েদের পথভ্রষ্ট করতে পারে। এরাই জ্বিনদের মধ্যে এমন একটা জাতি যারা মানুষের সমাজে সবচেয়ে বেশি সহনশীল হয়, মানুষের সাথে মিশতে পারে ভালো, মানুষের কাজ নকল করতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Si’lat জ্বিন নারীর রূপ ধারন করতে পছন্দ করে। সবচেয়ে বুদ্ধিমান জ্বিন হবার কারনে এই জ্বিনরা অনেক রাখডাক করে চলাফেরা করে যাতে কেউ তাদের সহজে না দেখতে পারে বা চিনতে পারে। তাই এই প্রজাতিটাকে খুব কম দেখা যায়। এরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় থাকে। তবে এদের থাকার জন্য লোকালয় সবচেয়ে ভালো জায়গা।
সিলাত জ্বিন আকার আকৃতি সহজেই পরিবর্তন করতে পারে। তাই এদেরকে চেনা খুব মুশকিল। এরা খুবই স্মার্ট টাইপের হয়। এরা সহজেই মানুষের কাজ নকল করতে পারে। এরা অনেক কৌশলী হয় এবং বিভিন্ন নকশা তৈরি করতে জানে। এরা মানুষের ছেলেমেয়েদের পথভ্রষ্ট করতে পারে। এরাই জ্বিনদের মধ্যে এমন একটা জাতি যারা মানুষের সমাজে সবচেয়ে বেশি সহনশীল হয়, মানুষের সাথে মিশতে পারে ভালো, মানুষের কাজ নকল করতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Si’lat জ্বিন নারীর রূপ ধারন করতে পছন্দ করে। সবচেয়ে বুদ্ধিমান জ্বিন হবার কারনে এই জ্বিনরা অনেক রাখডাক করে চলাফেরা করে যাতে কেউ তাদের সহজে না দেখতে পারে বা চিনতে পারে। তাই এই প্রজাতিটাকে খুব কম দেখা যায়। এরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় থাকে। তবে এদের থাকার জন্য লোকালয় সবচেয়ে ভালো জায়গা।
ভেটালা | Vetala
এই ধরনের জ্বিনগুলো অনেক মারাত্মক। এরা মানুষের মরা শরীরে ঢুকতে পারে এবং পচন ধরা থেকে মরা শরীরকে রক্ষা করতে পারে। তাই মানুষ ভুল করে ভেটালাকে জীবন্ত মানুষ ভাবে। বিদেশে এদেরকে জোম্বি বলা হয়। তবে কেউ যদি জোম্বি দেখেই থাকে তবে সেটা হচ্ছে ডেটালা জাতের জ্বিন।
এই ধরনের জ্বিনগুলো অনেক মারাত্মক। এরা মানুষের মরা শরীরে ঢুকতে পারে এবং পচন ধরা থেকে মরা শরীরকে রক্ষা করতে পারে। তাই মানুষ ভুল করে ভেটালাকে জীবন্ত মানুষ ভাবে। বিদেশে এদেরকে জোম্বি বলা হয়। তবে কেউ যদি জোম্বি দেখেই থাকে তবে সেটা হচ্ছে ডেটালা জাতের জ্বিন।
এই ধরনের জ্বিন নিজেদের আকার পরিবর্তন করতে পারে। কখনো কখনো এরা ভবিষ্যতবাণী আন্দাজ করতে পারে এবং অতীত বলে দিতে পারে। এদের এক ধরনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে।
গইলান
গইলান এমন একটা জ্বিনের জাতি যার কাজ হচ্ছে মানুষকে পথ ভুল করায়, গোলকধাঁধায় ফেলে। রাতে যখন মানুষ রাস্তায় বের হয় তখন তারা এই ধরনের জ্বিনদের খপ্পরে পড়ে। এরা অবশ্য যাদুকর জ্বিন নামেও পরিচিত। এরা যাদু করতে জানে। বিশেষ করে এরা ব্ল্যাক ম্যাজিক করতে পারে।
গইলান থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হচ্ছে আযান দেয়া। রাতের বেলা যদি কোনো মানুষ দেখে যে সে একই পথে বারবার চলছে তাহলে বুঝতে হবে সে গইলান জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এই অবস্থায় সবচেয়ে ভালো কাজটি তার হচ্ছে আযান দেয়া। গইলান সাধারণত কবরস্থানের আশেপাশে বেশি থাকে। তবে বনে-জঙ্গলেও এরা অনেক পরিমানে থাকে।
অলহান
অলহান হচ্ছে এক ধরনের শয়তান জ্বিনের নাম যারা অযু করার সময় অযুর পানি থেকে মানুষকে ধরে। ফলে অযু করাকালীন সময় মানুষ বিভিন্ন রকম হাসি-তামাশা করে এবং অযু করার প্রতি মনযোগ কমিয়ে দেয়।
খান্নাস
খান্নাস হচ্ছে জ্বিনদের মধ্যে আরো একটা জাত। এরা মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম গুজব রটায়। অর্থাৎ কোনো মানুষ গোপন কোনো কথা মনে মনে রাখলে খান্নাস সেটাকে সবার কাছে প্রকাশ করে দেয়। এছাড়া খান্নাসের উপস্থিতির কারনে মানুষ নিজের অজান্তেই তাদের মনের গোপন কথা গুলো অন্য মানুষের কাছে বলে দেয়। এদের আরেকটা জাত আমাদের বাথরুমে থাকে। তাই বাথরুমে ঢোকার আগে এদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া পড়ে যেতে হয়।
খিনযির
খিনযির আরো এক ধরনের শয়তান জ্বিন যারা নামাযের সূরা পড়ার সময় সেখানে বিভ্রান্তি তৈরি করে, সূরা পড়ার সময় ভুল করায়।
ক্বারিন
প্রতিটা মানুষ জন্ম নেয়ার পর পরই আল্লাহ্ সেই মানুষের সাথে একজন জ্বিনকে আজীবনের সঙ্গী করে দেন। এই জ্বিনের জাতের নাম হচ্ছে ক্বারিন। ক্বারিন জ্বিন সারাটা জীবন ধরে সেই মানুষকে ভুল পথে চালানোর চেষ্টা করে। মানুষ মনের অজান্তে যেসব ভুল করে সেগুলো ক্বারিন জ্বিনের ফাঁদে পড়ে করে। যখন মানুষ মারা যায় তখন এই জ্বিনটি মানুষের সাথে কবরে কিংবা শ্মশানে যেতেও পারে আবার নাও পারে। যদি না যায় তবে সেই জ্বিন সেই মানুষের বাসায় থাকে এবং মৃত মানুষের রূপ নিয়ে বাসার অন্যান্য সদস্য কিংবা সেই মৃত মানুষের বন্ধুদের ভয় দেখায়।