অপূর্ণ ইচ্ছা-২

একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হবার খুব ইচ্ছে ছিলো!

মেয়েটার বাবা-মা এবং পরিবার বলতে কেউ থাকবে না, শুধু ও একা থাকবে আর... বাকিটা পরে বলছি!

একসময় মেয়েটা থাকবে তার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। খুব আদুরে থাকবে সে। জীবনে কখনো নিজ হাতে বেড়েও খেতে জানবে না। সবসময় তাকে তার মা খাইয়ে দিবে। ঘরের কোনো কাজ করতে জানবে না ও। কাজ করতে গেলে গোলমাল বাঁধিয়ে ফেলবে। বাইরে বের হলেই বাবার গাড়িতে করে বের হবে। কখনো আকাশের সূর্যের আলো তাকে ছুতেও পারবে না। জীবনে কষ্ট কি জিনিস সেটাও সে বুঝবে না। প্রতিদিন সকালে দশটা-এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙ্গবে তার। ঘুম থেকে উঠেই হাতমুখ ধুয়ে মায়ের কাছে চলে যাবে চুল আঁচড়াতে। কখনো কারো সাথে কোনোদিন ঝগড়া করবে না। অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে কিছুটা ভয়ে ভয়ে কথা বলবে। কারো সাথে তর্ক করতে জানবে না, কারো জিনিস মেরে দিতে জানবে না। তার চোখ হবে তীক্ষ্ণ, উজ্জ্বল, স্পষ্ট। তার চুল হবে দেড় হাত লম্বা, রেশমি, কালচে সোনালি রঙের। তার height হবে আমার চেয়ে দুই-তিন ইঞ্চি কম। কারো দিকে মায়া ভরে তাকালে তার ঠোঁট দুটো কাঁপবে, কারো কাছে বকা শুনলে ভেউ ভেউ করে কাঁদবে। মনের মত কিছু না হলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়বে। একা একা থাকলে মনমরা হয়ে থাকবে। বন্ধুবান্ধব থাকবে হাতে গণা এক-দুটো। কারো বাসায় বেড়াতে যাবে না সে। সন্ধ্যার পর বাড়ির বাহিরে বের হবে না সে। পড়াশুনা করবে মেডিক্যাল সায়েন্সে। আর প্রচন্ড বুদ্ধিমতী হবে সে।

মেয়েটা একদিন বড় ধরনের এক্সিডেন্ট করবে। তার আত্নীয়রা ষড়যন্ত্র করবে তাদের ফ্যামিলির উপর। তাদের অঢেল সম্পত্তি নেয়ার লোভে তার বাবা-মা'কে খুন করবে তারা এক রাতে। সেইসাথে তাকেও খুন করার চেষ্টা চালাবে তারা। পাগলের মত দিশেহারা হয়ে গভীররাতে বাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে দৌঁড়াতে থাকবে সে প্রাণের ভয়ে। জীবনে প্রথমবারের মত একা একা রাতের বেলা রাস্তায় দৌড়াবে সে। চোখ দিয়ে পানি ঝরতে ঝরতে চোখ ঝাপসা হয়ে যাবে তার। এরকম বিপদে সে কোনোদিন পড়েনি, তাই কি করবে কি না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারবে না সে। পেছন থেকে তাকে তাড়া করতে থাকবে তার খুব কাছের কোনো আত্নীয়রা, যারা তার বাবার সম্পত্তির লোভে তাকে খুন করতে চেয়েছিলো। হাতে রামদা নিয়ে দৌড়াতে থাকবে তাকে মারার জন্য। অন্ধকার রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ একটা বিদ্যুতের খুঁটির সাথে মাথায় বাড়ি খাবে সে। প্রচন্ড আঘাতে মাথা ঘুরে উঠবে ওর। সাথে সাথে কপাল ফেটে রক্ত বের হতে থাকবে। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর জন্য পাগলের মত দৌঁড়াবে মেয়েটা। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা আমগাছ পাবে সে। অন্ধকারেই কোনোমতে সেই গাছে উঠে যাবে ও। ছোটবেলায় কয়েকবার আম গাছে উঠেছিলো ও। সেই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগবে এখন তার। গাছে উঠার মধ্যেই পেছন থেকে কয়েকজন লোকের আওয়াজ শুনতে পাবে ও। তাকে মারার জন্য এসেছিলো লোকগুলো, কিন্তু সেখানে তাকে না পেয়েই তারা চলে যাবে আরেক জায়গায়।

গাছে মরার মত পড়ে থাকবে মেয়েটা। তারপর ধীরে ধীরে নড়াচড়া শুরু করবে সে। গাছের একটা ডালের পাশে চাঁদের আলোতে একটা বাসার ছাদ দেখতে পাবে ও। পরিষ্কার, বেশ বড় একটা ছাদ। আমগাছের বড় বড় কয়েকটা ডাল সেই ছাদের উপর ঝুলে থাকবে। ডাল বেয়ে মেয়েটা অনেক কষ্টে ছাদে এসে শুয়ে পড়বে। থরথর করে কাঁপতে থাকবে সে শীতে, ভয়ে বুকটা লাফালাফি করতে থাকবে তার। কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করবে নীরবে। কয়েকটা পোকামাকড় ছাড়া আর কেউই তার মায়াকান্না শুনবে না।

সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবে সে। প্রথমে বুঝতে পারবে না সে কোথায় আছে। আস্তে আস্তে এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ে যাবে তার। মাথায় তীব্র ব্যথা শুরু করবে, শরীরের প্রতিটা জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা করবে তার। চারপাশে তাকাতে থাকবে সে। ছাদটা বেশ বড়। কিন্তু এই ছাদে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না মেয়েটা। বাসার কেউ না কেউ ছাদে উঠবেই একটা সময়। কিন্তু সে কিছু বুঝে উঠার আগেই ছাদের দরজা খুলে যাবে। একটা ছেলে ছাদে উঠবে। আর সেই ছেলেটা আর কেউ না। আমি..!!

আমাকে দেখে ছাদে পানির টাংকির পেছনে লুকিয়ে পড়বে সে। কিন্তু তার নীল ওড়না টাংকির একপাশে একটু দেখা যাবে। সেটা দেখে আমি চমকে যাবো ভয়ে। মনে করবো চোরটোর বসে আছে টাংকির পেছনে। আস্তে আস্তে আমি তার দিকে আগাবো। তাকে দেখেই চমকে যাবো আমি! খুব ভয়ে মেয়েটা জুবুথুবু হয়ে বসে থাকবে টাংকির পেছনে। মাথায় কিসে যেনো বাড়ি খেয়ে রক্ত জমে আছে তার। আমাকে দেখে কাঁপতে থাকবে সে। কিন্তু তার পোশাক আর চেহারা দেখে চোর বলে মনে হবে না তাকে আমার কাছে। বরং উঁচু কোনো ফ্যামিলির মেয়েই মনে হবে। তার সাথে কথা বলা শুরু করবো আমি।
-আপনি কে? এখানে কিভাবে এলেন?
-আমি...আমি... কথা জড়িয়ে আসবে মেয়েটার।
-আপনি এখানে এলেন কিভাবে? ধমকে উঠবো আমি, পরক্ষনেই বুঝবো এভাবে ধমক দেয়া উচিত হয়নি আমার।

মেয়েটা আমার কথার জবাব না দিয়ে কান্না শুরু করবে। আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাবো। মেয়েরা কান্না করলে কিভাবে সান্ত্বনা দিতে হয় সেটা আমি জানি না। তাই অপেক্ষা করবো তার কান্না থামার জন্য। কিছুক্ষণ কাঁদার পর সে সবকিছু আমাকে সংক্ষেপে বলবে। তার পেছনে যে খুনি লেগে আছে সেটাও আমাকে জানাবে। আমি তখনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবো ওকে আমার বাসায় জায়গা দেওয়ার। কিন্তু বাসার বাকি মানুষদের কিভাবে ম্যানেজ করবো! চিন্তায় পড়ে যাবো আমি। একটা বুদ্ধি বের করবো তখন। আমার রুমেই তাকে জায়গা দিবো, এমনভাবে লুকিয়ে রাখবো যাতে কেউ বুঝতে না পারে বাসায় অতিরিক্ত একজন মানুষ আছে।

মেয়েটাকে ছাদে একা রেখেই নিচে চলে যাবো টার্গেট ফিল আপ করার লক্ষ্যে। বাসায় আম্মুকে টেক্কা দেয়া অনেক ঝামেলার। সবসময় ছোঁক ছোঁক করেন উনি। আর বাসায় সকাল টাইমে বাকিরা প্রায় থাকে না বললেই চলে। সেদিনও আমি আর আম্মু বাসায় থাকবো। আম্মু পত্রিকা পড়বে ভেতরের রুমে বসে আর আমি মেয়েটাকে নিয়ে আমার রুমে চট করে ঢুকে দরজা আটকে দিবো। মেয়েটা তখনো কান্না করবে। তার মৃত বাবা-মায়ের জন্য বুক ফেটে যাবে তার। আমি বসে বসে তাকে দেখতে থাকবো। সান্তনা দিতে জানি না তাই দেওয়ার চেষ্টাও করবো না। খেয়াল রাখবো আম্মু যাতে আমার রুমে না আসে। কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে তাহলে!

আস্তে আস্তে মেয়েটার সবকিছু জানবো তখন আমি। মায়া লাগবে খুব মেয়েটার জন্য। খুব ইচ্ছে ছিলো মেয়েটার কয়েকমাস পর একটা হসপিটালে চাকুরি নিবে। কিন্তু সেটা আর হলো না তার ভাগ্যে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে সে। আমি তার চোখের পানি মুছতে গিয়েও মুছতে পারবো না। আমার খাটের নীচটা সবসময় খালি থাকে। প্রচন্ড অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও তাকে সেখানে জায়গা দিতে হবে আমাকে। কারন বেশিরভাগ সময় আমার রুমের দরজা খোলা থাকে। সাবধানে তাকে খাটের নিচে ঢুকিয়ে তার জন্য কিছু খাবার আর পানি আনবো আমি। আমার জন্য বানানো নাস্তাটাই তার জন্য আনবো। পাগলের মত সে নাস্তা খাবে। তার খাওয়ার স্টাইল দেখে বুঝতে পারবো জীবনে হয়ত খুব কমই সে নিজের হাতে খেয়েছে। সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাবে সে। প্রচুর খিদে জমে আছে তার পেটে। খাওয়ার পর আবারো কান্না করবে সে। এবার আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো। সুন্দরী মেয়েরা কান্না করার সময় সবচেয়ে বেশি মায়াময় দেখায়। তাদের দিকে তাকালে একটা মোহ কাজ করে। আমাকেও সেই মোহ পাবে। আমি তাকিয়ে থাকবো মেয়েটার দিকে।

সেদিন প্রায় সারাক্ষণই আমি দরজা আটকে রাখবো। মেয়েটার সাথে কথাবার্তা বলবো, তাকে সান্তনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করবো। তার অসহায়ত্ব বড় ভয়ংকর। আপন জন বলতে কেউই নেই এখন। কারো কাছে গিয়ে যে একবেলা খাবে সেটাও পারবে না এখন সে, কারন কোনো আত্নীয়ের বাসা চিনে না ও। তার উপর আরেকদল আত্নীয় তাকে মারার জন্য ঘুরছে। কাজেই সে এখন পুরোপুরি বন্দী। আমাকে যেভাবেই হোক তাকে সেইফে রাখতে হবে। কারন ততক্ষণে মায়া হয়ে যাবে তার প্রতি আমার। এই কয়েকটা ঘন্টা তার কান্না আমার মনকে অন্যরকম করে ফেলবে। সন্ধ্যার পর কিছু সময়ের জন্য খাটের নিচে তাকে জায়গা দিবো। মশা যাতে না কামড়াতে পারে সেজন্য কয়েল জ্বালিয়ে দিবো। রাত ১০ টা বাজার আগেই ঘুমিয়ে পড়ার ভান করবো আমি। কিন্তু সারারাত একটা অসহায় মেয়েকে খাটের নিচে শক্ত মেঝেতে শুতে দেওয়াটা পশুর মত আচরণ। তাই আমি তাকে খাটে শুইয়ে নিজে মেঝেতে শোবো। একটা চাদর বিছিয়ে মেঝেতে ঘুমাবো। মেয়েটা অনেক আপত্তি জানাবে, আমাকে নিচে শুতেই দিবে না। কিন্তু আমি তার কোনো কথাই শুনবো না। মেয়েটা আবারো কাঁদতে থাকবে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরবে। এবার আমি সাহস পাবো তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চমকে যাবো। মেয়েটা খাটে নেই! মাথা গরম হয়ে যাবে আমার। পরক্ষনেই রুমের ভেতরের ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ শুনতে পাবো। মেয়েটা ওখানে আছে তাহলে! হঠাৎ দরজা খুলে সে বের হবে। হাত-মুখ ধুয়ে এসেছে। সামনের দিকের চুল গুলো ভিজে থাকবে তার। স্বর্গের পরীর মত দেখাবে তাকে। কপালের ফোলাটা কমে যাবে। চোখ দুটো ফুলে থাকবে অতিরিক্ত কান্না করার ফলে। শুকনো মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে সে। তার চোখে কৃতজ্ঞতার একটা ছাপ দেখতে পাবো আমি। ওকে জিজ্ঞেস করবো তার রাতে ঘুম কেমন হয়েছে। সে বলবে খুব ভালো হয়েছে। আমাকে সেদিন প্রথমবারের মত ধন্যবাদ জানাবে সে। আবার কান্না শুরু করবে। আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাবো। সত্যিই তো! মেয়েটার আপন কেউই নেই এখন! সেজন্যই তো ও এত কাঁদছে।

আমি মেয়েটাকে আবারো খাটের নিচে ঢুকিয়ে রাখবো অনিচ্ছার সত্ত্বে। কিছুক্ষণ পর আমার নাস্তা নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিবো। দুজনে রুটি ভাগাভাগি করে খাবো। গতরাতে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম মেয়েটাকে, কিন্তু সে খায়নি। তাই এখন খিদে লেগেছে তার অনেক। খাওয়া শেষ করার পর আড্ডা দিবো আমরা। আস্তে আস্তে ফ্রি হতে থাকবে সে আমার সাথে। মেয়েটার সবকিছু জানবো আমি সেদিন। আমার সবকিছুও তাকে জানাবো। তাকে হাসানোর চেষ্টা করবো। সেদিন সে প্রথমবারের মত হাসবে। আমার ঠিক চোখে চোখ রেখে কথা বলবে। আমি কোনো বিষয় নিয়ে স্টাডি করলে মেয়েটা সেগুলো দেখবে, আমি মোবাইলে গেইম খেললে সেও আমার মোবাইল নিয়ে খেলবে, আমি টুকটাক কিছু লেখালেখি করলে মেয়েটা সেগুলো পড়ে পড়ে দেখবে, আমি তাকে খাটের নিচে ঢুকিয়ে খাবার আনতে গেলে আমার আসার জন্য বারবার উঁকিঝুঁকি মারবে, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আমার বিছানাটা নিজেই গুছিয়ে রাখবে, আমার কাছ থেকে গল্পের বই পড়তে চাইবে, আমার হেডফোন নিয়ে নিজের কানে লাগিয়ে মোবাইলে খবর শুনবে, সবসময় কম খাওয়ার চেষ্টা করবে। কখনো কখনো মায়াকান্না করবে, কখনো কখনো আমার দিকে লাজুক চোখে তাকাবে। আমি কখনো কখনো তাকে না দেখার ভান করে দেখে যাবো। সে আমার দেখাকে না বোঝার ভান করে বুঝে যাবে।

আমরা গল্প করবো। নিজেদের ছোটবেলা নিয়ে গল্প করবো। অবশ্যই ফিসফিসিয়ে গল্প করবো। বাসার লোক শুনে ফেললে সব যাবে। আমি ওর কাছ থেকে মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে টুকিটাকি জিনিস শিখবো। ওকে আমি এস্ট্রোনমি শিখাবো। আমার ল্যাপটপ ওকে চালাতে দিবো। আমার মোবাইলে ওর সাথে সেলফি তুলবো। মাঝরাতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ছাদে নিয়ে যাবো। ও খোলা ছাদে অন্ধকারে ছুটোছুটি করবে। আমাকে অসংখ্যবার থ্যাংকস জানাবে। তার জন্য টিউশনির টাকা দিয়ে নতুন ড্রেস কিনে আনবো। বাসায় সারাক্ষণ দরজা আটকে থাকবো বলে সবাই মানসিক রোগী বলে শুধাবে আমাকে। মেয়েটা মাঝেমাঝে আমাকে নিয়ে হাসবে। মাঝেমাঝে আমার দিকে আড়চোখে তাকাবে। তার সাথে আমি রাত জেগে আড্ডা দিবো। তাকে নতুন নতুন জিনিস জানাবো। হঠাৎ একদিন সে আমার কাপড় ধুয়ে দিবে। আমি এজন্য ধমক দিলে সে মুচকি মুচকি হাসবে। মাঝেমাঝে ও আমকে কিল দিবে। আমিও মাঝেমাঝে ওর চুলের ক্লিপ খুলে দিবো। আমাকে খুব ভালো বন্ধু ভাবতে শুরু করবে সে। আমি তাকে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ভাবতে শুরু করবো।

হঠাৎ একদিন খুব কান্না করতে থাকবে সে। চোখের পানিতে গাল, গলা সব ভিজে যাবে তার। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার কান্না দেখতে থাকবো। কাঁদতে কাঁদতে সে আমাকে বলবে কতদিন আর এভাবে আমি তাকে লুকিয়ে রাখবো। তার জন্য আমি অনেক বড় রিস্ক নিয়েছি। তাই সে আর আমার বাসায় থাকবে না। চলে যাবে অন্য কোথাও। আমি চিন্তায় পড়ে যাবো তাকে নিয়ে। আমি বুঝতে পারবো সে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে, তাই আমাকে যাতে তার জন্য বিপদে না পড়তে হয় সেজন্য সে চলে যেতে চাইছে আমার বাসা থেকে। সেদিন বিকেলেই সুযোগ বুঝে বাহিরে বের করবো তাকে। খুব টেনশনে থাকবে তখন সে। তাকে একটা হোটেল ভাড়া করে থাকার কথা বলে বের করে আনবো আমি বাসা থেকে। কিন্ত পরক্ষনেই তাকে নিয়ে আবারো বাসায় প্রবেশ করবো। ফ্যামিলির লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলবো আমি এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছি। মেয়েটার আত্নীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই। বাবা-মা রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। মেয়েটা প্রচন্ড অবাক হয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু আমি কোনো কথা বলবো না তখন। অপেক্ষা করবো ফ্যামিলির অ্যাকশনটা বোঝার জন্য।

আমার কথা নিয়ে কিছুক্ষণ নাটক চলবে বাসায়। ফ্যামিলির ছোট ছেলেটা পালিয়ে বিয়ে করেছে! বড়ই লজ্জার বিষয়। কিন্তু ফ্যামিলি মেনে নিবে আমাদের। যদিও সত্যিকারের বিয়ে হয়নি আমাদের মধ্যে। মেয়েটাকে আমার বাসায় রেখে দেওয়ার মত কোনো উপায় না দেখে আমি এই টেকনিক খাটাবো। বাসায় ঢুকে মেয়েটা আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকবো। আমি কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে চুপ হয়ে থাকবো। একটু পর সে আমাকে বলবে তার জন্য আমি অনেক করেছি। সে আমার বাসায় আর থাকতে চাইবে না। তার জন্য আমি অনেক কৌশল খাটিয়েছি, মিথ্যে বলেছি সবার সাথে। তাই সে আমার কাছে কিছু টাকা চাইবে একটা হোটেলে উঠার জন্য। টাকা চাইতে গিয়ে কান্না করে ফেলবে সে। ইতোমধ্যে বাসায় নানান রকম কথাবার্তা চলতে থাকবে আমাদের মিথ্যে বিয়েকে ঘিরে। সবাই এসে নতুন বউকে প্রশ্ন করা শুরু করবে। মেয়েটা কোনো জবাব দিবে না, শুধু কান্না করবে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলবে সে। আমি পানি এনে তাকে খাওয়াবো। আমি এতদিন পারিনি, তাই কান্না থামানোর চেষ্টা করবে এবার আমার পরিবারের মেয়ে সদস্যরা। সবার কাছে মেয়েটা হাতজোড় করে মাপ চাইবে, কিন্তু কিসের জন্য মাফ চাইছে সেটা কেউ বুঝবে না। সবাই বুঝবে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে হয়ত মাফ চাইছে সে। আমিও সত্য ঘটনাটা কাউকে বলতে পারবো না তখন। বললে হয়ত মেয়েটাকে বের করে দিবে আমার ফ্যামিলি।

সেদিন রাতের বেলা নিচে বিছানা করা হবে না আমার। সবার চোখে আমরা নতুন জামাই-বউ। তাই একই খাটে শুতে হবে আমাদের। মেয়েটা তখনো কাঁদতে থাকবে। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো। আর বলবো - তোমার পছন্দের কেউ আছে কিনা জানি না, কিন্তু আমি তোমাকে এই কয়দিনে পছন্দ করে ফেলেছি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোমাকে পছন্দ করায়, কিন্তু আমি কখনোই এর আগে তোমার মত নিষ্পাপ মেয়ে দেখিনি। তুমি যদি আমাকে পছন্দ না করো তাহলে বলে দিও, আমি কখনোই জোরাজুরি করবো না।

আমার কথা শুনে কান্না থামিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকবে মেয়েটা। হঠাৎ আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে সে। তার রেশমি চুল গুলো বাড়ি খাবে আমার নাকেমুখে। যা বোঝার বুঝে নেবো আমি। জড়িয়ে ধরবো একাকী মেয়েটাকে আরো শক্ত করে।