ইবলিশ শয়তানের অস্তিত্ব আমাদের সৃষ্টির বহু আগে থেকেই ছিলো। তার সাথে আল্লাহ্ তাআলা কখনো সরাসরি কথা বলেননি। অন্য কোনো ফেরেশতাদের মাধ্যমে কথা বলেছেন। ইবলিশের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো যেমন ইন্টারেস্টিং তেমনি ভয়াবহও!
ইবলিশ শয়তানের নাম আগে ইবলিশ ছিলো না। কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের মতে ইবলিশের নাম ছিলো আযাযীল। আবার অনেকের মতে তার নাম ছিলো নায়িল। সে ছিলো চার ডানা বিশিষ্ট এবং সকল ফেরেশতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাশীল। আল্লাহের অভিশাপ বর্ষিত হবার পর তার নাম ইবলিশ কিংবা শয়তান রাখা হয়।
মানুষ সৃষ্টির আগে থেকেই পৃথিবীতে জ্বিন জাতিরা বাস করতো। তাদের মধ্যে জন্ম নিলো আযাযীল। সেই জ্বিন জাতিরা অনেক যুদ্ধ করতো নিজেদের মাঝে। তাই তাদের ধরার জন্য আল্লাহ ফেরেশতাদের পাঠান পৃথিবীতে। ফেরেশতারা সব জ্বিনদের মেরে ফেললেও আযাযীল একদম বাচ্চা ছিলো বলে ফেরেশতারা তাকে আসমানে নিয়ে যায় নিজেদের সাথে রাখার জন্য। এভাবে আযাযীল ফেরেশতাদের সাথে থেকে থেকে আল্লাহের ইবাদত করে। তার ইবাদতের পরিমান বাড়ানোর সুবাদে সে একে একে সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আযাযীল ফেরেশতাদের সাথে থাকলেও তার জাত কখনোই ফেরেশতা ছিলো না, তার জাত ছিলো জ্বিন। অর্থাৎ আযাযীল ছিলো একজন জ্বিন। সে ছিলো জান্নাতের প্রহরী। দুনিয়া এবং আসমানের সমস্থ জায়গায় তার ইবাদতের জন্য সুনাম চলতো।
আযাযীল পৃথিবী থেকে উর্বর ও নোনা মাটি নিয়ে যায় এবং সেই মাটি দিয়েই পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ) কে বানানো হয়। তাই সে আদমকে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিলো অহংকারের বশে।
আল্লাহের অভিশাপ বর্ষিত হবার পর ইবলিশ শয়তানের চেহারা বেশ কুৎসিত, ভয়ংকর। আল্লাহের অভিশাপ যখন শয়তানের উপর পড়েছিলো তখন শয়তানের চেহারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তার মাথাকে জাহান্নামের একটা গাছের ফলের সাথে কল্পনা করেছেন আল্লাহ্ তাআলা। সেই গাছটা হচ্ছে যাক্কুম গাছ।
শয়তানের হাত এবং পা দুটোই আছে। সেগুলোতে বড় বড় নখ যুক্ত আঙ্গুল থাকে। শয়তান সহজেই তার ভয়ংকর চেহারা বদলাতে পারে। পৃথিবীতে বিভিন্ন নবী-রাসূল আসার সময় তাদের সাথে শয়তান বিভিন্ন রূপ ধরে দেখা করতো। শয়তান মানুষের রূপ ধরতে পারে, সাপের রূপ ধরতে পারে, বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের রূপ ধরতে পারে, পাখির রূপ ধরতে পারে এমনকি সমুদ্রের মাছ, ঘরবাড়ি এসবের রূপও ধরতে পারে। কিন্তু শয়তান দুটো জিনিসের রূপ কখনোই ধরতে পারে না। আমাদের নবীর রূপ এবং কাবাঘরের রূপ ধরতে পারে না শয়তান। পূর্বে সাপের পা ছিলো, সে সুন্দর কাপড় পড়তো এবং মুখ থেকে সুগন্ধ বের হতো। কিন্তু ইবলিশকে একদিন সে সাহায্য করে, ইবলিশকে তুলে নিয়ে যায় জান্নাতে। তারপর থেকে সাপের পা খসিয়ে দেন আল্লাহ্ এবং তার কাপড় সরিয়ে দেন। সাপকে অভিশপ্ত করেন যাতে দুনিয়াতে মানুষ সাপকে দেখলেই তাকে মেরে ফেলে। এছাড়া গাধা শয়তানকে দেখতে পায় এবং তখন সে ডেকে উঠে।
শয়তানের মাথায় দুটো শিং থাকে। ভোরবেলায় আল্লাহের তরফ থেকে একজন ফেরেশতা সূর্যের কাছে এসে সূর্যকে উদয় হতে বলে, যখন সূর্য উদয় হতে থাকে তখন শয়তান সূর্যকে উদয় হতে বাধা দেয়। ফলে সূর্য শয়তানের শিং এর উপর দিয়েই উঠে যায়। সেই সময় আল্লাহ্ শয়তানের নীচের অংশ জ্বালিয়ে দেন। এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় সূর্য যখন সিজদা করতে যায় তখন সূর্যকে বাধা দেয়ার জন্য আকাশে শয়তানের শিং উঠে। তখনো আল্লাহ্ তাআলা শয়তানের নীচের অংশটা জ্বালিয়ে দেন। তাই এই দুটো সময় আল্লাহের ইবাদত করা নিষেধ, এই সময়টাতে যারা ব্ল্যাকম্যাজিক করে তারা শয়তানের আরাধনা করে।
ইবলিশ জীবনে চারবার খুব কান্নাকাটি করেছিলো-
i. আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করার পর
ii. আসমান থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়ার সময়
iii. শেষ নবীর আগমনের সময়
iv. সূরা ফাতিহা নাযিলের সময়
ইবলিশ একা একা এখন পৃথিবীকে কন্ট্রোল করছে না। তার বিশাল বাহিনী আছে এবং এই বাহিনীটা সমুদ্রের উপর একটা সিংহাসনে অবস্থিত। এই সিংহাসনের চারদিকে প্রচুর সাপ থাকে। ইবলিশের কোনো বউ নেই। সে পাঁচটি ডিম পেড়েছিলো। পাঁচটি ডিম থেকে তার পাঁচটি ছেলে হয়েছে যাদের নাম- সাবরাদ, আউর, দাসিম, যিলনাবূর, মাসূত। প্রতিটা ছেলেই মানুষের পেছনে বাহিনী নিয়ে লেগে থাকে মানুষকে দিয়ে বিভিন্ন খারাপ কাজ করানোর জন্য।
ইবলিশ ছেলেদের শরীরের তিনটা জায়গায় থাকে। এগুলো হলো- চোখে, মনে এবং পুরুষাঙ্গে। আবার মেয়েদের শরীরেও তিনটা জায়গায় ইবলিশ থাকে- চোখে, মনে এবং নিতম্বে।
পৃথিবীতে কয়েকটা কাজ ইবলিশ প্রথম করে। যেমন শোক, আহাজারি করা, গান গাওয়া, নাক ডাকা সবকিছুই প্রথমে ইবলিশ করেছিলো।
ইবলিশ শয়তানের চাটনি, সুগন্ধ এবং সুরমা এই তিনটা জিনিস থাকে। শয়তানের চাটনি চেটে নিলে মানুষ মুখ দিয়ে খারাপ এবং অশ্লীল কথা বলে। শয়তানের সুগন্ধ হচ্ছে মানুষের রাগ উঠানো। এবং শয়তানের সুরমা যদি মানুষ চোখে লাগায় তবে সে আল্লাহের জিকির ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ইবলিশ শয়তানকে আল্লাহ কিছু বড় বড় ক্ষমতা দিয়েছেন। শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মত চলাফেরা করতে পারে। তার শক্তির জোরে খারাপ জ্বিনেরা মানুষের ক্ষতি করে। শয়তান বিভিন্ন পশু-পাখির রূপ ধরা থেকে শুরু করে বিশাল কোনো বাড়ির রূপও ধরতে পারে। তবে শয়তান আমাদের শেষ নবী এবং কাবা শরীফের রূপ ধরতে পারে না।
বাসা-বাড়িতে যেসব বিছানা সবসময় খালি থাকে সেসব বিছানাতে শয়তান আসন পাতে। তাই বাসা-বাড়িতে খালি বিছানা রাখা উচিত না। শয়তান দুপুরে ঘুমায় না, এমনকি বিশ্রামও নেয় না। শয়তান সবসময় বিশ্রাম নেয় আলো এবং ছায়ার মাঝে। অর্থাৎ শয়তানের শরীরের একটা অংশ থাকে রোদের আলোতে এবং আরেকটা অংশ থাকে ছায়াতে। এভাবে বসেই সে আরাম করে। তাই কোনো মানুষের এভাবে রোদে বসা উচিত নয়।
আযান দেওয়ার সময় শয়তান অনেক দূরে পালিয়ে যায়, যতদূর আযান শোনা না যায়। আযানের শব্দ শেষ হলে আবার সে ফিরে আসে। আবার আযানের আওয়াজ হলে একইভাবে সে দূরে পালিয়ে যায়। তাই আযানের সময় কুকুররা তাকে দেখতে পায় বলে তারা ডাকাডাকি করে। যখন নামাযের তাকবীর বলা হয় তখনো শয়তান দূরে পালিয়ে যায়। নামায শুরু হলে আবার সে ফিরে এসে মানুষের মনে ভুল-ভ্রান্তি ছড়ায়, নামাযে অমনোযোগী করে দেয়। রাতের অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে শয়তান তার দলবল নিয়ে দুনিয়াতে বিভিন্ন জায়গায় নেমে আসে। সেজন্য সন্ধ্যায় মাগরিবের আযানের সময় বাচ্চাদের রাস্তায় কিংবা বাড়ির বাহিরে থাকতে নিষেধ করেছেন আমাদের নবী।
শয়তান এক পায়ে জুতা দিয়ে চলে, অন্য পা তার খালি থাকে। তাই আমাদের মধ্যে কারো এক পায়ে জুতা ব্যবহার করা উচিত না। শয়তানের সবচেয়ে বেশি পছন্দের রং হচ্ছে লাল। শয়তান মানুষের পোশাক পড়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে নাপাক এবং জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকের চাহিদা শয়তানের কাছে অনেক বেশি। শয়তান তার মাথায় পাগড়ি পরে ঝালর নামিয়ে রেখে। তাই এই ধরনের পাগড়ি পড়া আমাদের উচিত নয়।
শয়তানের পানি খাওয়ার সিস্টেমটা অন্যরকম। সে পানি খায় এক ঢোকে। তাই আমাদের এক ঢোকে পানি খাওয়া উচিত না, কয়েক ঢোকে খাওয়া উচিত। এছাড়া শয়তান যে পাত্র দিয়ে খাবার খায় সেই পাত্রটা থাকে ভাঙ্গা। অর্থাৎ শয়তান ভাঙ্গা পাত্রে পানি এবং খাবার খায়। খাবারের সময় শয়তান বাম হাতে খায় এবং মাত্র একটা আঙ্গুল ব্যবহার করে সে খাবারের সময়। আমাদেরকেও এভাবে খাওয়া উচিত না।
যেসব পশুর গলায় ঘন্টা ঝুলানো থাকে যেমন গরু, ঘোড়া, কুকুর, ভেড়া, মহিষ, উট ইত্যাদি এসব পশুর উপর ইবলিশ শয়তানের প্রভাব বেশি থাকে। তাই এসব পশুকে সাওয়ারী হিসেবে কোনো মানুষ ব্যবহার করলে সেই মানুষটার সঙ্গী হয় ইবলিশ শয়তান।
শয়তান রাতেরবেলা খোলা পাত্রে থুতু ফেলে। তাই রাতে খাবার কিংবা পানির পাত্র ঢেকে রাখা উচিত। এছাড়া যারা ভোরে দেরি করে ঘুম থেকে উঠে তাদের চোখেমুখে শয়তান সকালে প্রস্রাব করে দেয়। শয়তানের শরীর প্রচন্ড পরিমান নাপাক থাকে, এতই নাপাক থাকে যে তাকে ধরা, ছোঁয়াও নাজায়েয। সন্ধ্যার সময় শয়তান মানুষের ঘরে ঘরে ঢুকে যায়। তাই শয়তানকে বাঁধা দেয়ার জন্য আল্লাহের নাম নিয়ে বাসার জানালা-দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। তখন শয়তান আর ভেতরে ঢুকতে পারে না।
ইবলিশ শয়তান তার জগতে একা নয়। খারাপ জ্বিনরা তার বাহিনীতে কাজ করে। প্রতিদিন ভোরবেলা শয়তান তার বাহিনীকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়। এই বাহিনীর শয়তানেরা মানুষকে বিভিন্নভাবে খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলায়। দিন শেষ যখন এসব বাহিনীর শয়তানেরা ইবলিশের কাছে এসে তাদের খারাপ কাজগুলো নিয়ে বলতে থাকে তখন ইবলিশ তাদের কাজ অনুযায়ী পুরষ্কৃত করে। কেউ মানুষের অল্প ক্ষতি করলে তাকে পুরষ্কৃত করে না ইবলিশ, কেউ খুব খারাপ কাজ করলে, মানুষের বড় ধরনের ক্ষতি করলে তাকে পুরষ্কৃত করে ইবলিশ।
নারীকে ইবলিশ শয়তান তার জাল হিসেবে ব্যবহার করে। যেসব নারীদের দুনিয়ার প্রতি লোভ বেশি, বেপর্দা, নিচু মনের তাদেরকে জাল হিসেবে ব্যবহার করে ইবলিশ। নারীর মাধ্যমে ফিতনা ঘটায় ইবলিশ।
রাগারাগি করা অবস্থায় এবং যৌন উত্তেজনা থাকা অবস্থায় ইবলিশ মানুষকে কাবু করে ফেলে। তাই এসব সময়ে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এছাড়া ইবলিশ মানুষের চোখ দিয়ে নিজের সম্পত্তি কম দেখায় এবং অন্যের সম্পত্তি বেশি দেখায়, ফলে অন্যের সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ বাড়ে। মানুষ রাগারাগি করলে ইবলিশ মানুষের মন নিয়ে বাচ্চাদের মত খেলা করে। মানুষ যখন নেশাগ্রস্ত হয় তখন দুনিয়ার সকল প্রকার কামনা-বাসনা এবং উত্তেজনার দিকে ইবলিশ মানুষের মনকে ঘুরিয়ে দেয়। যেসব মুমিন খুবই কৃপণ, কখনো দান করে না তারা ইবলিশের খুব পছন্দের মানুষ। আর যেসব কাফেররা উদার, দানশীল তাদেরকে দেখতে পারে না ইবলিশ।
পেট ভরে খাওয়ার পর ইবলিশ মানুষকে আলসে করে দেয়। ফলে মানুষ নামায না পড়ে আরাম করে কাটিয়ে দেয় নিজের অজান্তেই। নামাযের মধ্যে ইবলিশ ঘুম এনে দেয় মানুষের। ইবলিশের একটা বিশেষ শিশি আছে। শিশিতে বিশেষ কিছু জিনিস ছিটানো থাকে। নামায পড়ার সময় নামাযীকে ঐ বিশেষ শিশিটা সে শোঁকায়। ফলে নামাযের মধ্যে ঘন ঘন হাই উঠে মানুষের। হাই তোলার সময় শয়তান খুবই আনন্দিত হয়ে হাসতে থাকে মানুষকে নিয়ে। তাই নামাযে হাই তোলাকে কন্ট্রোল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ যখন মসজিদ থেকে বের হয় তখন ইবলিশের বাহিনীতে খবর চলে যায় এবং সেই লোকটার কাছে চলে আসে ইবলিশের বাহিনীর জ্বিনগুলো। এভাবে তারা সারাদিন মানুষকে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
ইবলিশ মানুষকে কবরের মধ্যেও প্রতারণায় ফেলে। কবরে যখন মানুষকে প্রশ্ন করা হয় তার রব কে তখন শয়তান সেই মৃত মানুষটার সামনে নিজেকে দেখিয়ে নিজের আকৃতি প্রকাশ করে বলে সেই তার রব। এছাড়া কিয়ামতের আগে যখন দজ্জালের আগমন ঘটবে তখন ইবলিশ শয়তান দজ্জালের সাথে কাজ করবে। দজ্জাল মানুষের মৃত বাবা-মা'কে সামনে এনে হাজির করবে এবং সবাইকে বোঝাবে সেই এই পৃথিবীর মালিক। ওদিকে সেই মৃত বাবা-মায়ের রূপ ধরে থাকবে তখন ইবলিশ শয়তান।
বাজারের জায়গা গুলোতে শয়তান বেশি থাকে। যারা কাফির তারা ধরা খায় ইবলিশের এই প্রতারণাতে। বাজার কিংবা যেকোনো মার্কেটে সবার প্রথমে ঢোকা এবং সবার শেষে সেখান থেকে বের হওয়া উচিত না। বাজারে শয়তানের ঝান্ডা পোতা থাকে। বাজারে বেশিরভাগ সময় জিনিসপত্র বেচাকেনাতে মিথ্যে কথা এবং প্রতারণা ঘটে বলে শয়তানের আবাস্থল থাকে বাজারে।
যখন মেয়েদের কোনো কারন ছাড়া অতিরিক্ত পিরিয়ড হয় সেটাও হয়ে থাকে ইবলিশের জন্য। যখন একটা বাচ্চা জন্ম নেয় তখন ইবলিশ বাচ্চাটার পাজরে একটা গুতা দেয়। ফলে বাচ্চাটি কেঁদে উঠে। কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) এর ব্যাতিক্রম ছিলেন। তিনি জন্ম হবার সময় শয়তান তাকে খোঁচা দিতে পারেনি। অনেকের মতে অন্যান্য নবী-রাসূলেরাও জন্ম হবার সময় ইবলিশের এই খোঁচা খাওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলো।
নামায চলাকালীন সময় ইবলিশ প্রতিটা মানুষের যৌনাঙ্গে ঢুকে পড়ে এবং মলদ্বারে সে ডিম পাড়ে। ফলে মানুষ মনে করে তার ওযু হয়ত ভেঙ্গে গিয়েছে। প্রতিরাতে মানুষ যখন ঘুমাতে যায় তখন ইবলিশ শয়তান মানুষের মাথাতে তিনটা গিট বাঁধে। প্রতিটা গিট বাঁধার সময় সে বলে যাতে মানুষটা সারারাত ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু সেই মানুষটা যদি রাতে কোনো এক সময় উঠে আল্লাহের নাম নেয় তবে শয়তানের প্রথম গিট খুলে যায়। যদি সে ওযু করে তবে শয়তানের ২য় গিটও খুলে যায়। যদি সে নামায পড়ে তবে শয়তানের ৩য় গিটও খুলে যায়। এভাবে নামায পড়লে প্রতিটা সকাল খুব ঝরঝরে যায় সেই মানুষটার।
ইবলিশ শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মত চলাচল করে। মানুষ যখন উদাসীন থাকে এবং অন্যমনস্ক হয়ে থাকে তখন শয়তান সেই মানুষকে টার্গেট করে তাকে ভুল পথে চালানোর জন্য। শয়তান মানুষের মনে এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে যে মানুষ আপনা-আপনিভাবেই শয়তানের ভুল পথে চলাচল করা শুরু করে। এক্ষেত্রে শয়তান মানুষের চিন্তা-চেতনা এমন করে ফেলে যে মানুষ মনে করে সে ঠিক পথেই চলছে, আসলে বাস্তবে সে ভুল পথে চলছে।
শয়তানকে অনেকে বেজির মত তুলনা করেছেন। আবার কেউ কেউ সাপের সাথেও তুলনা করেছেন। শয়তান বেজি কিংবা সাপের মত মানুষের মনের গর্তে তার মুখ দিয়ে রাখে এবং মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। মানুষ যখন আল্লাহের নাম নেয় তখন শয়তান মানুষের মন থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। আবার আল্লাহের নাম নেয়া বন্ধ করলে আবারো সে মানুষের মনে মুখ কিংবা শুড় রেখে দেয়। এছাড়া শয়তান মানুষের মন-মগজের সাথে লেপ্টে থেকে মানুষের ক্ষতি করে।
শয়তান মানুষের উপর বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ক্ষতি করে। সে মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করাতে সক্ষম। যখন মানুষ নিজের বুদ্ধিবিবেচনা করে খারাপ কাজ বাদ দেয় তখন শয়তান মানুষের মনে আক্রমণ করে। এভাবে ইবলিশ দিন দিন আমাদেরকে নিজের গোলাম বানাচ্ছে।