আমাদের পৃথিবীতে চোখে দেখার মত অনেককিছু আছে যেগুলোকে আমরা সহজেই দেখতে পাই। আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রাণি যেমন মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা এদেরকেও দেখতে পাই। আবার আমাদের আশেপাশে যা কিছু আছে সেগুলোও আমরা চোখ দিয়ে দেখি। আমরা চোখ দিয়ে কোনো কিছু দেখার ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছি প্রত্যেকেই। কেউ এক্সিডেন্টালি চোখের অসুখের কারনে ঠিকমত দেখতে পায় না। আবার অন্ধ মানুষরা কিছুই দেখতে পায় না।
আমাদের
মহাবিশ্বে দুটো জিনিসের অস্তিত্ব আছে সবখানে, একটা বস্তু বা Matter,
আরেকটা
শক্তি বা Energy. আমরা বস্তুকে চোখ দিয়ে দেখতে পাই কিন্তু শক্তিকে দেখতে পাই
না। তবে সব বস্তুকে আমরা চোখ দিয়ে দেখতে পাই না, তেমনি কিছু
বস্তু হচ্ছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, কিংবা এধরনের
আরো কিছু micro organism. এমনকি একটা পদার্থ গঠনের ক্ষুদ্রতম একক
পরমানুকেও আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না। শক্তি বা energy কেও আমরা চোখ
দিয়ে দেখতে পারি না তবে অনুভব করতে পারি। শক্তির উপর ভিত্তি করে অনেক থিওরি এবং
জটিল জটিল অংকও করা হয়। তাই মহাবিশ্বে বস্তু এবং শক্তি এই দুটোর অস্তিত্ব নিয়ে
কারো মতভেদ নেই বললেই চলে।
বস্তু দেখার শর্ত হচ্ছে দুটো। যদি আমরা কোনো বস্তুতে আলো ফেলি এবং বস্তুটা যদি সেই আলোর কিছু অংশ নিঃসরণ করে আমাদের চোখে ফেলে তাহলে সেই বস্তুকে দেখা যাবে। আবার যদি কোনো বস্তু থেকে নিজে নিজেই আলো নিঃসরণ হয় বা বস্তুটি আলো তৈরি করতে পারে তাহলেও আমরা সেই বস্তুকে দেখতে পারবো। Micro organism গুলোকে আমরা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে বড় করে দেখতে পারি, তখনো আমাদের আলোর প্রয়োজন হয়।
আমাদের বিশ্বে
আমরা ছাড়াও অনেক প্রজাতির প্রাণি আছে, যাদের
চিন্তাশক্তি থেকে শুরু করে চলনশক্তি সবই আছে। তবে অন্যান্য প্রাণি এবং আমাদের
মধ্যে পার্থক্য একটাই সেটা হলো বুদ্ধিশক্তি এবং বিবেক। প্রাণিদের বিবেক নেই, বুদ্ধি থাকলেও
সেটা খুব কম। কিন্তু মানুষের বুদ্ধি অনেক প্রখর কারন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
পৃথিবীতে মানুষ আসার আগেই জ্বিন নামক একটা অদৃশ্য জাতি এসেছিলো। ওরা সত্যি বলতে
অদৃশ্য না। ওদেরকে অনেক পশুপাখিরা চোখে দেখে। কিন্তু আমাদের চোখে কিছু ক্ষমতার
অভাবে আমরা তাদের দেখতে পাই না। আমার চোখ অত পাওয়ারফুল করে বানানো হয়নি।
অনেকেই হয়ত
জানেন পৃথিবীতে কয়েকধরণের আলোক রশ্মি আছে যেমন অবলোহিত রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি, এক্সরে, দৃশ্যমান
আলোকরশ্মি ইত্যাদি। এসবের মধ্যে আমরা শুধু দৃশ্যমান আলোকরশ্মি দেখতে পাই।
বাকিগুলোর অস্তিত্ব থাকার সত্ত্বেও আমরা সেগুলোকে দেখতে পাই না। এই রশ্মিগুলো
আমাদের কাছে অদৃশ্য কিন্তু এদের অস্তিত্ব ঠিকই আছে। জ্বিন জাতিটাও হচ্ছে ঠিক তেমনি, এদের অস্তিত্ব
আছে কিন্তু আমরা এদের দেখতে পারি না। এই জাতিটার অস্তিত্ব আমরা মাঝেমাঝে হয়ত অনুভব
করতে পারি কিন্তু সবাই হয়ত সেটা পারেন না। পৃথিবীতে অনেক রহস্য এখনো ঝুলে আছে
অমীমাংসিত অবস্থায় যেগুলোর ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি। তাই বলে সেগুলো
অস্বীকারও করা যাবে না।
হাজার বছর ধরে জ্বিনদের নিয়ে বিভিন্ন মানুষের গবেষণা এবং ধর্মীয় কিছু অংশবিশেষ নিয়ে বলবো এখন।
হাজার বছর ধরে জ্বিনদের নিয়ে বিভিন্ন মানুষের গবেষণা এবং ধর্মীয় কিছু অংশবিশেষ নিয়ে বলবো এখন।
জ্বিন শব্দের
অর্থ হচ্ছে অদৃশ্য, গুপ্ত, লুকায়িত। জ্বিনদের আদিপিতার নাম ছিলো
সামুদ। তিনি সৃষ্টি হবার পর আল্লাহের নিকট কামনা করেন যে তাদেরকে
যেনো কেউ দেখতে না পায়, পৃথিবীতে যেনো তারা অদৃশ্য অবস্থায় থাকতে পারে এবং যখন তারা মারা যাবে তখন তারা যেনো সবাই জোয়ান হয়ে মারা যায়। তাই একটা জ্বিন যখন বুড়ো হয়ে মারা যায়, মারা যাওয়ার ঠিক আগে সে জোয়ান হয়ে যায় এবং তারপর মারা যায়। একটা জ্বিন লু এর আগুন দিয়ে তৈরি অর্থাৎ যে আগুনে কোনো শিখা নেই। এজন্য কোনো জ্বিন মারা যাওয়ার সময় তার শরীর ধোঁয়া হয়ে যায়। আমরা হয়ত অনেকে খালি মাঠে কিংবা রাস্তায় কখনো কখনো ধোয়া দেখতে পাই কিন্তু ধোয়ার উৎপত্তি খুঁজে পাই না। এসব ধোঁয়া হচ্ছে একটা জ্বিন মারা যাওয়ার পর তার মৃত শরীরের ধোঁয়া। তাই যুগ যুগ
ধরে মানুষ জ্বিনদের সরাসরি দেখতে পায় না, মাঝেমাঝে দেখতে
পায় এবং অনুভব করতে পারে। মানুষ জ্বিন জাতিকে দেখতে পায় না বলেই তারা আজ পর্যন্ত
রহস্যময় একটা জাতি। আমরা ধীরে ধীরে এই জাতির নিয়ে অনেককিছু জানার চেষ্টা করবো।
আমাদের পৃথিবীতে
বেশিরভাগ জ্বিনদের শরীরে কোনো রং থাকে না বলে তাদের দেখা যায় না। তাদেরকে সচ্ছ
ক্রিস্টালের মত লাগে বলেই আমরা তাদের সবসময় দেখতে পারি না। তবে কিছু জ্বিন লাল
কিংবা সবুজ রং এর হতে পারে যখন তারা তাদের রূপ পরিবর্তন করে।
জ্বিন জাতিদের সাথে আমাদের সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক। আমাদের যেমন মস্তিষ্ক আছে, জ্বিনদেরও তেমনি মস্তিষ্ক আছে। এরা আমাদের মত নিজের ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করতে পারে, যেকোনো পরিস্থিতিতে উপস্থিত বুদ্ধি প্রকাশ করতে পারে। আবার আমাদের মত এদের ব্রেইনকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিও আছে। একটা জ্বিন যেকোনো বিষয় নিয়ে বিবেচনা, পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান সব কিছুই করতে পারে। তবে মানুষ সৃষ্টির সেবা জীব বলে মানুষের তুলনায় জ্বিনদের ব্রেইন অনেক ক্ষেত্রে কম শক্তিশালী, কম বুদ্ধিশক্তি সম্পন্ন। তাই জ্বিনেরা কোনো যুক্তি সহজে বোঝে না, চোখের সামনে যেটা দেখে সেটাই বিশ্বাস করে ফেলে। তাদের এই স্বভাবকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই জ্বিনদের ধোঁকা দিতে পারেন।
আমরা প্রায় নব্বই পার্সেন্টের উপর মানুষ হঠাৎ কোনো জ্বিনকে যদি সশরীরে দেখি তাহলে ভয় পেয়ে যাবো। কিংবা কেউ যদি জ্বিনের উপস্থিতি টের পায় অন্ধকারে তবে সেও ভয় পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কারন জ্বিনদের চেহারা বিশেষ সুবিধার হয় না। কিন্তু মজার একটা কথা হচ্ছে জ্বিন জাতিরাও আমাদের প্রচুর ভয় পায় কিন্তু সেটা আমরা মানবজাতিরা বুঝি না। একটা ঘরে যখন হঠাৎ করে কোনো মানুষ ঢুকে এবং সেই ঘরে যদি কোনো জ্বিন থাকে তবে সে চমকে যাবে। কিংবা কোনো মানুষ হঠাৎ করে কোনো জ্বিনের সামনে চলে আসলেও সেই জ্বিনটা ভয় পায়, হোক সেটা রাতে কিংবা দিনের আলোতে। কিন্তু আমরা যখন তাদের নিয়ে বেশি আলোচনা করি কিংবা তাদের উপস্থিতি টের পেলে ভয় পেয়ে উঠি তখন তারা এটা খেয়াল করে, তারা বুঝে যায় আমরা তাদের ভয় পাই। এই সুযোগে তারা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। জ্বিনদের ভয় দেখানোর সবচেয়ে ভালো কয়েকটা উপায়ের মধ্যে একটা হচ্ছে হাসির শব্দ, তারা হাসির শব্দ দিয়ে মানুষকে ভয় দেখায়। বিভিন্ন প্রাণির রূপ ধরে ভয় দেখায়। কিংবা ছায়ামূর্তি হয়েও তারা মানুষকে ভয় দেখাতে সক্ষম। এছাড়া কিছু জ্বিন নূপুরের শব্দ করে, জন্তু-জানোয়ারের শব্দ করে, পরিচিত কোনো মানুষের গলা নকল করে শব্দ করে, মেঝেতে হাঁটার শব্দ করে, বাচ্চার কান্নার শব্দ করে, কোনো কুকুরের কান্নার আওয়াজ করতে পারে, লাল চোখ যুক্ত মুখের অবয়ব ধরে ভয় দেখাতে পারে।
অনেকে মনে করেন জ্বিন যখন নেকড়ের রূপ নেয় তখন সে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়। কিংবা যখন জ্বিন কোনো নেকড়ের গন্ধ পায় তখন পালায়। সেজন্য কিছু দেশে মানুষ নেকড়ের পোশাক পড়ে থাকে, ঘরে নেকড়ের পশম, নখ, হাড়, চামড়া এসব রাখে। তারা বিশ্বাস করে এসব ঘরে থাকলে জ্বিন ঢুকবে না। জ্বিনরা নেকড়েকে ভয় পায়। তবে জ্বিন জাতি বিভিন্ন জীবিত পশুপাখি-জন্তুজানোয়ারের রূপ ধরতে পারে। তারা সাধারণত কুকুর (বেশিরভাগ সময় কালো কুকুর), সাপ (বিশেষভাবে সাদা সাপ), ছাগল, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া, পাখি, বিড়াল, খরগোশ এদের রূপ ধরে বেশি। কিংবা কোনো বাসায় যখন কোনো প্রাণিকে পালন করা হয় তখন তাদের রূপ ধরে সহজে কোনো মানুষের বাসায় এরা বাস করতে পারে। তবে জ্বিনরা কালো কুকুরের রূপ ধরে বেশি, তাই কালো কুকুরকে শয়তানের সাথে তুলনা করা হয়। বেশিরভাগ সময় জ্বিনেরা এসবের রূপ নিলেও নেকড়ের রূপ নিতে চায় না। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে জ্বিনরা ভাবে নেকড়েদের শক্তি তাদের চেয়েও বেশি। তাই তারা নেকড়েদের এড়িয়ে চলে। যখন একটা জ্বিন মানুষের রূপ নেয় তখন তাদের পা টা ছাগলের পায়ের মত খুর যুক্ত দেখায়।
রাতে কোনো অসুখ হলে কিংবা অসুখ বেড়ে গেলে, হঠাৎ কারো কোনো অসুখ হলে মানুষ মনে করে সেটা জ্বিনের কাজ। তবে মানুষের যখন বেশি মাথা ব্যথা করে তখন সে এটার কারন হিসেবে জ্বিনকে বেছে নেয়। কারো বংশগত সমস্যা থাকলে সেটা যদি তার মধ্যে চলে আসে তখন সে ভাবে তাকে তার পূর্বপুরুষকে ধরা জ্বিন ধরেছে। যখন মেডিকেলি, মেন্টালি এবং পিজিক্যালি কোনো রোগ ধরা পড়ে না তখন সেটা জ্বিন আছরের জন্য হচ্ছে বলে ধারনা করা হয়।
জ্বিনরা শত কিংবা হাজার বছর বাঁচতে পারে। কারন কোনো বংশে যদি পূর্বপুরুষেরা কোনো জ্বিন ডেকে আনেন তবে পরের বংশধররাও একই জ্বিনকে ডেকে আনতে পারবে যদি জ্বিন না মারা যায়। তাই জ্বিনেরা অনেক দিন পর্যন্ত বাঁচে। আবার জ্বিনদের কিছু জাতি কয়েকশ বছরের বেশি বাঁচে না। কারো কারো বয়স একশ বছরের নিচে হলেও সে মারা যেতে পারে।
জ্বিন unseen সবকিছু দেখতে পায়, সবকিছু জানে। এটা একটা ভুল ধারনা। জ্বিন কখনো গায়েবী কিছু জানতে পারে না। একটা কাগজে একটা নাম্বার লিখে সেটাকে ঢেকে রাখলে জ্বিন কখনোই জানবে না সেখানে কি নাম্বার লিখা ছিলো যদি না সে ধরে দেখে কাগজটা। জ্বিনরা কখনো কারো ভবিষ্যতবাণী করতে পারে না। যদি সে ভবিষ্যতে কারো ক্ষতি করতে চায় তবে সে ভবিষ্যৎবাণী করে তার ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া তার আর কোনো ক্ষমতা নেই হুবহু ভবিষ্যতবাণী বলে দেয়ার। তবে কিছু খারাপ জ্বিন ভবিষ্যতবাণী করার চেষ্টা করে। তারা আকাশে থাকে। সেখানে মেঘের আড়ালে ফেরেশতারা মানুষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বলতে থাকে। তখন খারাপ জ্বিনগুলো তাদের জ্যোতিষী বন্ধুদের কথামত আকাশে কান পাতে ফেরেশতাদের কথা শোনার জন্য। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের দমন করার জন্য আকাশে উল্কা নিক্ষেপ করেন।
জ্বিনেরা ঘর থেকে যেকোনো জায়গা দিয়েই বের হতে পারে, এ ধারনাটা ভুল। একটা জ্বিন যদি কখনো কারো ঘরে ঢুকে যায় তবে সে যেই জায়গা দিয়ে ঢুকেছে সেই জায়গা দিয়েই বের হতে চায়। অন্য কোথাও ফাঁকা জায়গা থাকলেও সে সেখান দিয়ে যেতে চায় না। এর মানে হচ্ছে ওরা কিছুটা বোকা প্রকৃতির। কিছু জ্বিন আছে যাদের রং কালো, লাল এবং সবুজ। এরা উড়তে পারে, পানির নিচে ভ্রমণ করতে পারে, দ্রুতগতিতে যেকোনো মরুভূমি পাড়ি দিতে পারে। জ্বিনরা মাঝে মাঝে মানুষের বাসা গরম করে ফেলে। যখন কোনো জ্বিন মানুষের ঘরে ঢোকে তাহলে সেই ঘরটা গরম হয়ে যায়, ভার ভার লাগে।
জ্বিনদের জীবনযাপন অনেকাংশে মানুষের মত। তারা খাওয়াদাওয়া করে, ইবাদত করে, খারাপ জ্বিনেরা খুনোখুনি করে, খারাপ কাজ করে, মানুষকে ভয় দেখায়। কিছু ভালো জ্বিনেরা পড়ালেখা করে মাদ্রাসায় তবে চাকরি করে না, তারা বাসা বানায় আবার সেখানে নকশা তৈরি করতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তারা মানুষের বাসা দখল করে থাকে, খারাপ জ্বিনগুলো মানুষের বাথরুমে থাকে। ভালো জ্বিনগুলো মসজিদ কিংবা পবিত্র জায়গাগুলোতে থাকে।
জ্বিনেরা চলাচলের জন্য আলাদা পথ বানিয়ে নেয়। তাদের চলাচলের পথটা মানুষের তৈরি রাস্তার মত হয় না। তাদের পথ থাকে বিভিন্ন জায়গার উপর দিয়ে যেমন পানির উপর সেটা হতে পারে, কারো বাসা-বাড়ির উপর দিয়ে সেটা হতে পারে কিংবা কোনো বাড়ির উঠান, বনজঙ্গল, খালি মাঠের উপর দিয়েও তাদের চলাচলের অদৃশ্য পথ হতে পারে।
জ্বিনদের মধ্যে কয়েকজন জাদু জানে, সন্মোহোনবিদ্যা
জানে। তারা ব্ল্যাক ম্যাজিক পর্যন্ত করতে পারে। এগুলো অবশ্য খারাপ জ্বিনদের কাজ।
তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। তাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা আছে, তারা বিয়ে করে, তাদের
বাচ্চাকাচ্চা হয়, সেই বাচ্চাকাচ্চা গুলো খেলাধুলা করতে পারে। তারা যেকোনো
গাড়ি চালাতে পারে, গাড়িকে নিজের কন্ট্রোলে আনতে পারে, বিভিন্ন
ইলেকট্রিক ভিডাইস কন্ট্রোলে আনতে পারে, ফোন করতে পারে
মানুষকে, টাকা সরাতে পারে, চুরি করতে পারে
যদিও চোর জ্বিনের সংখ্যা খুবই কম। তারা মানুষের বাসা-বাড়ির যেকোনো জিনিস এক জায়গা
থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে বেশি মজা পায়। কিছু শক্তিশালী জ্বিন কাউকে তুলে নিয়ে যেতে
পারে।
এছাড়া জ্বিনেরা মানুষের মত কয়েকটা
জিনিস করতে পারে না যেমন ওরা রান্না করতে পারে না তবে একদমই পারে না তা না। ওরা
মানুষকে কোনো বোতল কিংবা পাতিলে ঢুকাতে পারে না কিন্তু মানুষ সেটা জ্বিনের
ক্ষেত্রে পারে। অর্থাৎ মানুষ জ্বিনকে পাতিল কিংবা বোতলের ভেতর ঢোকাতে পারে।
জ্বিন মানুষের মত ঝড়বৃষ্টির রাতে বের
হতে পারে না, এটা তাদের একটা প্রতিবন্ধকতা। ঝড়বৃষ্টিকে তারা খুব ভয় পায়।
তাই ঝড়বৃষ্টির রাতে বাহিরে খারাপ জ্বিন থাকে এই কথাটা ভুল। জ্বিনেরা মানুষের মত
উচ্চশিক্ষা বা ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করতে পারে না, ওদের টাকার লোভ
নেই বলতেই চলে কারন তাদের জীবন চালাতে টাকা লাগে না, তাদের প্রধান
দুটো খাবার আল্লাহের নাম নিয়ে জবেহ করা যেকোনো পশুর হাড় এবং গোবর। এগুলো প্রকৃতিতে পাওয়া
সহজসাধ্য। যেকোনো জড় বস্তুকে ওরা চোখ দিয়ে
সন্মোহোন করে সরাতে পারে কিন্তু মানুষ সেটা পারেনা। তাদের এই সন্মোহোনবিদ্যাকে
মেসোমারিজম বলা হয়। তারা মেসোমারিজম প্রয়োগ করে এক জায়গার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই
বিভিন্ন ছোটখাটো জিনিস সরাতে পারে।
কিছু জ্বিন খুব ছোট আকৃতির হয়, এদেরকে আমরা বামন বলে ভুল করি তবে এরা জ্বিনদের একটা রূপ। সাধারণত গভীররাতে একদল বামনকে দেখা যায় রাস্তায় কিংবা মাঠেঘাটে, গাছে উঠে দলবেঁধে, হঠাৎ কেউ এদের দেখতে পেলে এরা উধাও হয়ে যায়, এরা হচ্ছে এক ধরনের জ্বিন। একটা জ্বিনের শরীর অনেক সূক্ষ্ণ হয়, ফলে সে ঘরের দেয়ালের ফাটল, ঘরের কোনায় এবং খুব সংকুচিত জায়গায় সহজে বাস করতে পারে। তাই তাদেরকে একটা বোতলেও ঢুকিয়ে রাখা যায় আবার খালি পাইপের ভেতরেও তারা ঢুকে থাকতে পারে। যখন কোনো বাসায় কোনো শিশু রুমের কোনার দিকে তাকিয়ে কান্নাকাটি করে তখন বুঝতে হবে সে জ্বিন দেখতে পেয়েছে, কারন একটা রুমে জ্বিনদের থাকার সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে রুমের কোনার দিক।
জ্বিনেরা আমাদের শরীরকে অনেক বড় বড় করে দেখে যেহেতু তাদের শরীর অনেক সূক্ষ্ণ। তাই তারা যখন আলোর রূপ ধরে কোথাও আসে তখন তাদের সৃষ্ট আলোটা খুব ছোট আকারের দেখা যায়। জ্বিনদের শরীর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করতে পারে। এই ফিল্ড মাঝে মাঝে আমাদের বাসা-বাড়ির ইলেকট্রিক ডিভাইজকে নষ্ট করে দিতে পারি। তাই কোনো বাড়িতে যদি একই সময় দুদিন / তিনদিন / প্রতিদিন কোনো ইলেকট্রিক ডিভাইজ, লাইট-ফ্যান এসব নষ্ট হয় তখন ধরে নিতে হবে যে সেই বাসায় কিংবা রুমে প্রতিদিন জ্বিন ঢোকে।
মানুষের শরীরে জ্বিন ঢোকার রাস্তা হচ্ছে আয়না, কান, মুখ। মানুষ আয়না দেখলে তার শরীরের ভেতর জ্বিন ঢুকে যেতে পারে। রাতে শোয়ার পর মুখ এবং কান দিয়ে যদি অদৃশ্য কেউ ফুঁ দেয় তার মানে হচ্ছে একটা আপনার জ্বিন শরীরের ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে। জ্বিনরা মানুষের ব্রেইনের একদম কেন্দ্রে আক্রমণ করতে পারে, তাই মানুষ যখন জ্বিন দ্বারা আছর হয় তখন সে অজ্ঞান অবস্থায় থাকে এবং তার শরীর, মানসিকতা সবকিছু জ্বিনের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে থাকে। মানুষের শরীর থেকে জ্বিন যেসব জায়গা থেকে বের হয় তখন সেসব জায়গা লালচে হয়ে যায়, পোড়া যায় কিংবা রক্ত জমে যায়। তবে এই ঘটনা অনেক কম ঘটে।
জ্বিন প্রধানত তিনটা কারনে মানুষকে আছর করে-
i) যদি কোনো মানুষ জ্বিনের শরীরে উপর না জেনে কোনোকিছু ফেলে কিংবা তাদের আস্তানা (যেমন পরিত্যাক্ত বাড়ি, রুম, জায়গা) ধ্বংস করে দেয় তবে সেই মানুষকে জ্বিন আক্রমণ করে,
ii) যদি কোনো মানুষের পূর্বপুরুষ কোনো জ্বিনের ক্ষতি করে তবে সেই জ্বিনটি ওই মানুষটিকে আক্রমণ করে,
iii) কোনো জ্বিন যদি কোনো মানুষকে ভালোবাসে তবে তাকে পাওয়ার জন্য আক্রমণ করে।
তবে জ্বিন কারো প্রেমে পড়লে তাকে ছাড়ানো কিছুটা কষ্টকর। যখন কোনো জ্বিন কোনো মানুষকে ভালোবেসে ফেলে তবে সেই জ্বিনকে মেরে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। তা না হলে সে তার ভালোবাসার মানুষের পিছু ছাড়ে না। অন্যান্য ক্ষেত্রে কোরানের বিভিন্ন সূরা এবং আয়াত ব্যবহার করে জ্বিনকে ছাড়ানো হয়। আবার কিছু জ্বিনকে সন্তুষ্ট করে তারপর ছাড়াতে হয়। ছাগল, ভেড়া, মুরগি কিংবা গরু দান করে জ্বিনকে সন্তুষ্ট করতে হয়।
কোনো মানুষ পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই তার সাথে একটা জ্বিনকে সঙ্গী করে দেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমার সারাজীবনের সঙ্গী জ্বিনটার নাম হচ্ছে ক্বারিন। আমাদেরকে বেশিরভাগ সময় শয়তানি বুদ্ধি দিতে থাকে এই জ্বিন। মানুষের মনের নেগেটিভ চিন্তাভাবনার বেশিরভাগই করিয়ে দেয় ক্বারিন প্রজাতির জ্বিন। মানুষ মারা যাওয়ার পর এই জ্বিনটি মানুষের সাথে কবরে যেতেও পারে আবার নাও পারে। যদি না যায় তবে সেটি মৃত মানুষের বাসায় থেকে যায় এবং মৃত মানুষের রূপ ধরে বাসায় অন্যান্য মানুষকে ভয় দেখায়।