পছন্দের বিষয়ে চান্স পাওনি?

তোমরা অনেকেই হয়ত HSC পরীক্ষা দেয়ার পর সবচেয়ে বড় একটা টেনশনে থাকো যে কোথায় ভর্তি হবা, কোন বিষয়ে ভর্তি হতে চাও এসব নিয়ে। এক্ষেত্রে তোমার মনের মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারা, নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে পারা এসব জিনিস অনেকখানি তোমার ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি এবং ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। হয়ত তুমি খুব ভালো প্রিপারেশন নিয়ে পরিক্ষা দিয়েছো, ভালো একটা নাম্বারও এসেছে তোমার, কিন্তু তোমার মত আরো ৫০/৬০ জনের নাম্বার এসেছে যাদের মধ্যে তোমার সিরিয়াল চলে গেছে সেই ৫০/৬০ জনের পরে। তারমানে তোমার চান্স পাওয়াটা তোমার ভাগ্যে ছিলো না।

আবার অনেকে আছে খুবই অল্প পড়ালেখা করে, প্রায় তেমন কষ্ট না করেই খুব ভালো ভালো জায়গায় চান্স পায়। সেটা হচ্ছে তার ভাগ্য। তার ভাগ্য তৈরিই হয়ে ছিলো তাকে ভালো জায়গায় চান্স পাওয়ানোর জন্য।


তোমাদের মধ্যে অনেকেই একদম ছোটবেলা থেকে মনেপ্রাণে কোনো একটা ক্যারিয়ারে পছন্দ করে বসে থাকো। হয়ত কেউ মনেপ্রাণে ডাক্তার হতে চাও, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও, কেউ সাহিত্য নিয়ে পড়তে চাও, ভাষা নিয়ে পড়তে চাও, কৃষিবিদ হতে চাও। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক স্টুডেন্টরাই ছোটবেলা থেকে যেটা হতে চায় সেটা আর হতে পারে না বড় হয়ে। তার পরিশ্রম এবং ভাগ্য, এই দুটো যদি ম্যাচ না করে তবে সে তার লক্ষ থেকে দূরে চলে যায়। তার ছোটবেলা থেকে দেখা স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। চান্স না পেলে পছন্দের বিষয় নিয়ে আর পড়া যায় না।


সত্যিই কি আসলে পড়া যায় না? নাকি অন্য বিষয় নিয়ে অনার্স লেভেলে পড়লে সেই বিষয় ছাড়া আর কোনো বিষয় নিয়ে পড়াটা যায়েয না!


এখানে ছোট্ট একটা ভুল আছে। তোমাদেরকে একটা গল্প শোনাই। তোমরা সবাই ছোটবেলা পার করে এসেছো, তাই না? ছোটবেলায় মনে আছে যখন তুমি নতুন নতুন স্কুলে যেতে তখন কেউ কেউ সামনের বেঞ্চে সিট রাখার জন্য ছোটাছুটি করতে? অবশ্যই মনে থাকার কথা। ছোটবেলায় স্কুলে যখন পরিক্ষা দিতে তখন মনে অবশ্যই একটা জিনিস কাজ করতো যে তোমাকে ক্লাসে highest নাম্বার পেতে হবে, না হলে মিনিমাম একটা ভালো স্কোর করতে হবে তাই না!


কিংবা তোমাদের অনেকেই হয়ত পুরো সিলেবাস শেষ না করেই পরিক্ষা দিতে, পরিক্ষায় যখন তোমার না পড়া জিনিসগুলো আসতো তখন তুমি আফসোস করতে -ইস! যদি ওগুলো বাসা থেকে পড়ে আসতে তাহলে তোমার highest নাম্বার আর কে ঠেকাতো!


কিন্তু যখন তোমার পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়, একটা ক্লাস থেকে আরেকটা ক্লাসে উঠো তখন কিন্তু তোমার সেই না পড়া জিনিসগুলো না পড়াই থেকে যায়, পুরোনো বই ঘাঁটতে চাও না, সেগুলো জায়গা পায় স্টোররুমে। পরিক্ষার দিন তোমার না পড়ে আসার আক্ষেপটাও আর মনে থাকে না তোমার।


ছোটবেলার এই গল্পটা তোমাদের অনেকের সাথেই হয়ত মিলে যাবে। তোমরা এখন এই বয়সে অনেক বড় হয়ে গেছো। তাই তোমাদের যদি বলি স্টোররুম ঘেটে সেই ছোটবেলার বইগুলো বের করে সেই না পড়া জিনিসগুলো পড়তে তাহলে কিন্তু সেই জিনিসগুলোকে এখন মোটেও অত কঠিন মনে হবে না। তুমি হাসবে খুব সেই পড়াগুলো নিয়ে। তোমার কাছে পান্তা ভাতের চেয়েও তরল মনে হয় ক্লাস ওয়ান-টু এর ABCD পড়াটা। অথচ সেই পড়াগুলোই তুমি একটা সময় বাদ দিয়েছিলে, আক্ষেপ করেছিলে সেই পড়াগুলোর জন্য, এই পড়াগুলো না পড়ার জন্যই তোমার ক্লাস টু তে রেজাল্ট খারাপ এসেছিলো, ম্যাথে মাত্র ৪০ পেয়েছিলে। আর এখন! সেই ম্যাথ বইয়ের বাপ তুমি।


ঠিক তেমনি ভর্তি পরিক্ষার পর পছন্দের বিষয় নিয়ে না পড়তে পারাটা মানেই যে তুমি কখনো তোমার পছন্দের বিষয়কে নিয়ে পড়তে পারবে না এমনটা কিন্তু না! তুমি যে বিষয় নিয়ে অনার্স করছো সেটার পাশাপাশি তোমার পছন্দের বিষয় নিয়ে টুকিটাকি জানতে বাধা কোথায়! আমাদের এখনকার যুগটা অনেক ডিজিটাল। সাধারণ যেকোনো ভার্সিটিতে পড়তে তোমাকে ইন্টারনেটের ব্যবহার করতেই হবে। তাই ইন্টারনেট থেকে তোমার পছন্দের বিষয়কে জেনে নাও। তোমার পছন্দের বিষয়ের একটা ভালো সিলেবাস গুগল থেকে ডাউনলোড করে ফেলো। সিলেবাস দেখে পিডিএফ বই ডাউনলোড করে ফেলো। তারপর শুধু ফার্স্ট ইয়ার এবং সেকেন্ড ইয়ারে কি কি পড়ায় সেগুলো সিলেবাস দেখে পড়ে ফেলো। যদি বইয়ের পড়া বুঝতে না পারো, সিলেবাসের টপিক গুলো ইউটিউবে সার্চ দিয়ে অনলাইনে ক্লাস করে ফেলো। যে সময়টা তুমি ফেসবুকে দিচ্ছো, বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে দিচ্ছো, হ্যাং আউটে দিচ্ছো, মোবাইল গেইমসে দিচ্ছো সেটা তুমি তোমার পছন্দের বিষয়কে দাও। মনে রাখবে তোমার সবচেয়ে বড় এবং কাছের শিক্ষক হচ্ছে ইন্টারনেট। তাই পছন্দের বিষয়ে চান্স না পেলেই যে সেই বিষয় নিয়ে আর কোনোদিন পড়া যাবে না এটা টোটালি মূল্যহীন।