ভার্সিটি লাইফে যাদের Avoid করা উচিত!

স্কুল কিংবা কলেজ লাইফ শেষ করে তোমরা সবাই একটা সময় ভার্সিটিতে উঠো। স্কুল-কলেজে থাকার সময় তোমাদের অনেক ধরনের ফ্রেন্ড থাকে। তবে স্কুল লাইফের বন্ধুদের মত কোনো বন্ধু হয় না, এটা তোমাকে মানতে হবে। স্কুলের ফ্রেন্ডের মধ্যে তেমন কোনো স্বার্থ থাকে না। থাকলেও সেটা মাত্র কয়েকদিনের জন্য থাকে পরে ঠিক হয়ে যায়। কারন স্কুলের বয়সটাই হচ্ছে একটা আবেগের বয়স, এই সময় সামান্য যত্নই উজ্জ্বল করে দিতে পারে তোমার ভবিষ্যৎ, সামান্য অবহেলাই ধ্বংস করে দিতে পারে তোমার ভবিষ্যৎ। স্কুলে পড়ার সময় তোমাকে বেশিরভাগ সময়ই স্কুলের আন্ডারে থাকতে হতো, একটা ভয় কাজ করতো স্কুলের প্রতি। ক্লাসে বেশিরভাগ সময় স্কুল ড্রেস পড়েই যেতে হতো, তাই প্রতিটা বন্ধুকে তোমার কাছে একইরকম মনে হতো যদিও তাদের সত্ত্বা ভিন্ন।

কলেজের বন্ধু গুলোর মধ্যে আবার কিছুটা স্বার্থ বিরাজ করে। প্রক্সি প্রেসেন্টস, হোমওয়ার্ক করে দেয়া, খাওয়ানো, ঘুরতে যাওয়া, পরিক্ষায় দেখানো, দলবেঁধে স্যারের বাসায় পড়তে যাওয়া, নতুন কোনো হ্যান্ডসেট বের হলে সেটাকে গিয়ে দেখে আসা, নতুন কোনো ভিডিও কিংবা গান বের হলে সেটা শেয়ার করা, প্রথম মেয়েদের সাথে ক্লাস করা, ক্লাসের মধ্যে কাউকে ভালোলাগা এগুলো সবকিছুই কলেজ লাইফে ছেলেমেয়েদের মধ্যে চলতে থাকে।

তবে ভার্সিটি হচ্ছে একটা বিশাল মিলনমেলা। এখানে তুমি হাজারটা ছেলেমেয়েদের সাথে প্রতিদিন মেশার সুযোগ পাও। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ছেলেমেয়েরা তোমার সাথে প্রতিদিন ক্লাস করে। খেয়াল করো ওরা কিন্তু তোমার এলাকার কেউ না। ওরা যেভাবে বড় হয়েছে, তুমি হয়ত ওদের মত করে বড় হওনি। কিংবা ওরা তাদের বন্ধুদের সাথে যেরকম আচরণ করতো তুমি হয়ত তোমার বন্ধুদের সাথে সেরকম আচরণ করতে না। তোমার আর ওদের মাঝে এই একটাই ডিফারেন্স, যেটা স্কুল এবং কলেজে অনেক কম ছিলো। একটা স্কুলে প্রায় সবাই একই এলাকার ছেলেমেয়ে হয়, দুই-একটা অন্য এলাকার। একটা কলেজে বড়জোর অর্ধেক একই এলাকার ছেলেমেয়ে থাকে, বাকিগুলো অন্য এলাকার। কিন্তু ভার্সিটিতে নিজের এলাকার ছেলেমেয়েদেরকে পাওয়া যায় খুব কমই। ভার্সিটিতে তোমার ডিপার্টমেন্ট কিংবা ডিপার্টমেন্টের বাইরেও অনেকের সাথেই খাতির হয়। তবে ভার্সিটির ফ্রেন্ডগুলোর মাঝে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বার্থ জিনিসটা কাজ করে। কারন এখানে প্রতিটা ছেলেমেয়েই মোটামুটি ম্যাচুয়েট। সবাই সবার ভালো বুঝতে শিখে যায়। যদিও সব ফ্রেন্ডের মাঝে স্বার্থ জিনিসটা নেই, যাদের এককথায় বেস্ট ফ্রেন্ড বলা যায়। প্রতিদিন, কিংবা প্রতিমাসে নতুন কোনো মুখের সাথে হঠাৎ করেই পরিচয় হয়ে যাচ্ছে তোমার। পরিচয় হলেই কেউ ভালো বন্ধু হয়ে যায় না, সেজন্য তুমি তাকে নিয়ে একটু গবেষণা করে দেখবে সে আসলে কেমন। তাই ভার্সিটি লাইফে যে ধরনের ফ্রেন্ডগুলোকে তোমার avoid করা উচিত তারা হচ্ছে-

১. দুধের মাছি: 
শুধুমাত্র ক্লাস মিস দিলে, পরিক্ষার আগের দিন, পরিক্ষার হলে, পরিক্ষা শুরু হবার আগে, প্রজেক্ট বা প্রেসেন্টেশনের টাইম হলে, জরুরি কোনো দরকার হলে তোমাকে তাদের দরকার হয়। যখন এই টাইপের মানুষ গুলোর শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনের জন্য তোমাকে দরকার হয় তার তাদের just avoid করো।

২. বন্ধুর দোষ বলা: 
তোমার যেসব বন্ধুরা তোমার ভালো কোনো বন্ধুকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে, মিথ্যে কথা ছড়ায়, কিংবা তোমার ছোটবেলার কোনো বন্ধুকে মূল্য দেয় না কিংবা তোমার কোনো বন্ধুর সামনে তোমাকে পচায়, তোমার দোষ তুলে ধরে, তোমাকে অপমানিত করে, just avoid them.

৩. নারী কাতরতা: 
মেয়ে কিংবা মেয়েবন্ধু নিয়ে যাদের একটু বেশি চুলকানি তাদের বন্ধুত্বকে ঝেড়ে ফেলো। তুমি যদি তোমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো তাহলে পেছন থেকে এরা ব্যাড কমেন্ট করবেই। কিংবা তোমার মেয়েবন্ধুকে এরা তোমার গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে পুরো ভার্সিটি ছড়াবে। বেশিরভাগ সময় গ্রাম থেকে আসা এবং হলে থাকা ছেলেগুলো এসব কমেন্ট করে। এদের সকালটা শুরু হয় ভার্সিটির মেয়েদের দেখে এবং রাত শুরু হয় মোবাইলে ভিডিও দেখে। এরা ভার্সিটির সব মেয়েদের চেহারা মোটামুটি চেনে। একটা জায়গায় আড্ডা বসলে এদের মূল আলোচনার বিষয় থাকে কোন মেয়ে কি করে, কি ধরনের এসব নিয়ে। তাদের মতামত হচ্ছে কোনো ছেলে একটা মেয়ের সাথে কথা বলা মানেই রিলেশন হয়ে যাওয়া। তাই সময় থাকতে just avoid them. এদের জন্য মেয়েমহলে তোমার দুর্নাম হতে পারে, অনেকদিনের ভালো বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যেতে পারে।

৪. সোসাল মিডিয়াগুলোতে চুলকানি: 
কিছু বন্ধু পাবে তুমি ভার্সিটিতে যাদের সোসাল মিডিয়াগুলোতে একটু বেশিই চুলকানি। ধরো ফেসবুকে তুমি একটা স্ট্যাটাস দিলে আর তারা তোমাকে এই নিয়ে মেসেজে খোঁচাচ্ছে এটা কি ধরনের স্ট্যাটাস হলো। কিংবা ক্লাসে তোমাকে নিয়ে কথা বলছে যে কি স্ট্যাটাস দাও তুমি, কিংবা তার ছবিতে কেনো লাইক দাও না কেনো কমেন্ট করো না, আবার কমেন্ট করলেও এটা কি ধরনের কমেন্ট এসব বলতে থাকে। আবার তুমি রাতে ফেসবুকে থাকলে এরা জিজ্ঞেস করে এত রাতে কি করো কিংবা কোনো কারন ছাড়াই মেসেজ করে জ্বালায় তোমাকে ভার্চুয়াল জগতে। এগুলো যদি তোমার কোনো বন্ধু প্রতিদিন তোমার সাথে করতে থাকে তাকে ফেসবুক থেকে + নিজের লাইফ থেকে avoid করো।

৫. সিজিপিএ নিয়ে গর্ব: 
এটা প্রতিটা ভার্সিটিতে একটা কমন ব্যাপার। এই জগতে সবার মস্তিষ্ক সমান হলেও তাকে চালনা করার ক্ষমতা সবার ক্ষেত্রে সমান না। তোমার ক্লাসে তোমারই কোনো বন্ধু হয়ত সারা সেমিস্টারে না পড়েই ভালো রেজাল্ট করে যাচ্ছে কিন্তু তোমার আরেক বন্ধু সারা সেমিস্টার কষ্ট করার পড়েও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না। তোমার কোনো বন্ধুর যদি সিজিপিএ বেশি থাকে তবে তারা ক্লাসে হয়ত নিউট্রাল থাকে, নিজের রেজাল্ট কাউকে বলে না। আর কিছু ধরনের ছেলেমেয়ে আছে যাদের সিজিপিএ খুব ভালো এবং সেটা সবাইকে বলে বেড়ায়। তবে বলে বেড়ানোটা দুই-তিন দিন হলে সওয়া যায় কিন্তু তোমার কোনো বন্ধু যদি প্রতিদিন তোমাকে এবং আশেপাশের আরো বন্ধুকে নিজের সিজিপিএ নিয়ে বলে বেড়ায় তবে সেটা সহনীয় না। একটা স্টুডেন্টের সিজিপিএ ভালো মানে এই না যে সে সবদিক দিয়েই পারপেক্ট। এই ধরনের সিজিপিএ ধারী বন্ধুদের কাছে অপমান ছাড়া কখনো সন্মান পাবে না তুমি। এরা নিজেদের লাইফস্টাইল, নিজেদের পড়ালেখা, নিজেদের কাজকর্মকে বেশি প্রাধান্য দেয় সবার কাছে। এদের কাছে কোনো কিছু বুঝতে গেলে প্রায়ই অপমানিত হওয়া লাগে, মানুষকে ছোট করার একটা টেন্ডেন্সি থাকে এদের। তাই try to avoid them.

৬. পন্ডিতবর্গীয় শ্রেণি: 
কিছু ফ্রেন্ডকে দেখবে এরা যা বলে কিংবা যা করে সেটাই ঠিক, অন্য কেউ কিছু করলে সেটা ভুল। সমাজে যেমন এসব লোকের অভাব নেই, ভার্সিটিতেও এসব ছেলেমেয়েদের অভাব নাই। তুমি হয়ত একটা এসাইনমেন্ট অনেক কষ্ট করে করেছো কিন্তু তাদের কাছে তোমার এই কষ্টের কাজটা তুচ্ছ। অর্থাৎ এই ধরনের ফ্রেন্ডগুলো তোমার মূল্য বুঝতে চায় না, এদের দ্বারাই ভার্সিটিতে বেশি কষ্ট পায় অন্যান্য স্টুডেন্টরা, নিজেদের ছোট মনে করে। যারা খুব সহজসরল টাইপের তাদের সাথে যদি এমন পন্ডিতবর্গীয় কোনো ফ্রেন্ডের পরিচয় হয় তবে সহজসরল স্টুডেন্টটা সবসময় নিজেকে হীন, নিচু মনে করতে থাকে। ফলে তার মানসিক সমস্যা দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি বকা খাওয়ার চান্স থাকে এই পন্ডিতবর্গীয় ফ্রেন্ডের কাছ থেকে। এদের টেন্ডেন্সি হচ্ছে তোমাকে খাটানো আর বিনিময় বকা দেয়া, হীন করে কথা বলা। তাই সময় থাকতে avoid this পন্ডিত মার্কা বন্ধু।

৭. ডিজিটাল প্রতিবন্ধী: 
কয়েক ধরনের ফ্রেন্ডকে দেখবা যারা সারাটাদিন নিজের ঘাড় ৪৫ ডিগ্রি বাঁকিয়ে নিচের দিকে স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এরা মোবাইলে দিনের অর্ধেক সময় সোসাল মিডিয়াগুলোতে কাটায়, বাকি অর্ধেক সময় মোবাইলে গেইমস খেলে। এরা মানুষের সাথে তেমন কথা বলে না, মিশতেও চায় না। এদের ধ্যান-জ্ঞান-কর্ম-দিবস সবকিছু নিজের স্মার্টফোনকে ঘিরে। COC, candy crash, youtube এগুলোই হচ্ছে এদের কর্মক্ষেত্র। শুধু সেমিস্টার ফাইনাল আসলে এরা একটু অবসর পায় মোবাইলের কাছ থেকে। এরা বন্ধু হিসেবে ভালো না, এদের কাছে তুমি কখনোই সঠিক কোনো তথ্য পাবে না। এরা নিজেরা ক্লাস মিস দিয়ে তোমার থেকে ক্লাস লেকচার গুলো নেয়। তাই এই ধরনের প্রতিবন্ধীর সাথে পরিচয় হলে এখুনি তাকে avoid করো।